সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি ১৩ বছরেও

পার্কিং নৈরাজ্যে বাড়ছে যানজট জনভোগান্তি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

রাজধানীজুড়ে পার্কিং নৈরাজ্যে বাড়ছে যানজট ও জনভোগান্তি। গত ১৩ বছরেও নগরীর গাড়ি পার্কিং মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের ফলে সৃষ্ট যানজট নিরসনে ২০০৭ সালের প্রথম দিকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গাড়ি পার্কিং মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় ঢাকা সিটি করপোরেশন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। এ বিষয়ে নেই কোনো নীতিমালা। ফলে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের ফলে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় যানজট লেগেই থাকছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পার্কিং সমস্যা সমাধানে আমরা বর্তমান মেয়রের সার্বিক তত্ত্বাবধানে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে অনেকগুলো স্থান পার্কিংয়ের জন্য প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। পার্কিংয়ের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকার কথাও জানান এই কর্মকর্তা। রাজধানী ঢাকায় গাড়ি পার্কিং সমস্যা দীর্ঘদিনের। এ বিষয়ে নেই কোনো নীতিমালা। এ সমস্যা সমাধানে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনো উদ্যোগই বাস্তবায়ন হয়নি। বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় পার্কিং সংকট সবচেয়ে বেশি থাকায় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ২০০৭ সালে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এতে বলা হয়েছিল, এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে একদিকে ডিএসসিসির আয় বাড়বে, অন্যদিকে যানজট নিরসন হবে। কিন্তু গত ১৩ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। জানা গেছে, নগরীর বেশির ভাগ ভবনেই পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। ফলে নগরবাসী সড়ক দখল করে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং অব্যাহত রেখেছে। এতে নগরীতে অসহনীয় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে ২০০৭ সালে নেওয়া হয় এ মহাপরিকল্পনাটি। এটি বাস্তবায়ন হলে নগরীতে যানজট কমার পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের আয়ও বাড়ার কথা রয়েছে। এই পার্কিং মহাপরিকল্পনাটি হাতে নেওয়ার পর এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ওই সময় একটি খসড়াও তৈরি করে ডিএসসিসির আরবান প্ল্যানিং বিভাগ। নগরীর বিভিন্ন এলাকার পার্কিং স্পটগুলোতে কত সংখ্যক গাড়ি পার্কিং করা যায় তাও নির্ধারণ করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাড়ি পার্কিং নিয়ন্ত্রণের জন্য ডিসিসিতে একটি আলাদা বিভাগ খোলারও কথা ছিল। বিভাগটি পার্কিং স্পট ছাড়াও তৈরি করবে আলাদা পার্কিং স্পেস। সার্বক্ষণিক মনিটরিং ও পার্কিং টোলও আদায় করবে বিভাগটি। যারা টোল আদায় করবে তাদের আলাদা ড্রেস এবং আইডি কার্ড দেওয়া হবে। সিদ্ধান্ত ছিল, টোল আদায় কর্মীদের অনুমতি ছাড়া রাস্তার দুই পাশে কেউ গাড়ি পার্কিং করতে পারবে না। এতে গাড়ি পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শৃঙ্খলাই ফিরে আসবে না, কমে যাবে যানজটও। কিন্তু অর্থ সংকটসহ নানা জটিলতায় এটি বাস্তবায়ন করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে ডিএসসিসির আরবান প্ল্যানিং বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ার কারণেই পার্কিং মহাপরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।

 তিনি বলেন, নগরীতে ভালো পার্কিং ব্যবস্থার বিকল্প নেই। কিন্তু ডিএসসিসির আয় খুবই কম। সরকারি অর্থ ছাড়া এ আয় দিয়ে উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব নয়। জানা যায়, রাজধানী ঢাকায় দুর্বিষহ যানজট সমস্যা প্রতিদিন তীব্রতর হচ্ছে। বিশেষ করে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, বিপণিবিতান প্রভৃতি জায়গায় যাতায়াত করা এক যন্ত্রণার কাজ। যানজটের কারণে কেবল রাজধানীতে প্রতিদিন বিভিন্ন খাত থেকে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা আয় নষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে যানজটের কারণে দিনে আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রতিদিন ঢাকার রাস্তায় নামছে প্রায় ২০০ বিভিন্ন ধরনের নতুন পরিবহন। ২০৩০ সালে ঢাকায় জনসংখ্যা হবে ৩ কোটি। এ প্রেক্ষাপটে যানজট নিরসনে উদ্যোগ নেওয়ার সময় এখনই। ট্রাফিক বিভাগের হিসাব মতে, সড়কের কম করে হলেও ৩০ ভাগ বা তারও বেশি দখল হয়ে আছে অবৈধ পার্কিং এবং নানা ধরনের দখলদারদের হাতে। সংশোধিত স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানিং-আরএসটিপির হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ঢাকায় কমবেশি ১৫ ভাগ যাত্রী প্রাইভেট গাড়িতে যাতায়াত করেন। এই প্রাইভেট কারের দখলে থাকে ৭০ ভাগেরও বেশি রাস্তা। পরিকল্পিত কার পার্কিং নগরীর যানজট কমিয়ে আনবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর