বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

নিখোঁজ সংবাদের সূত্র ধরে ভয়ানক প্রতারণা

ধরা খেলেন প্রতারক ফারুক হোসেন ফিটু

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতায় চোখ রাখতেন ফারুক হোসেন ফিটু। সংবাদপত্রে নিখোঁজদের সন্ধানে কিংবা কোনোকিছু হারিয়ে যাওয়ার বিজ্ঞপ্তি চোখে পড়লেই ঠিকানা ও জিডির নম্বর সংগ্রহ করে শুরু হতো প্রতারণা। তিনি নিজেকে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিচয় দিয়ে সন্ধানপ্রার্থীর স্বজনদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায় করতেন। সব টাকা তিনি নিতেন বিকাশের মাধ্যমে। গত চার বছর ধরে এভাবে শত শত মানুষের কাছ থেকে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন ফারুক হোসেন ফিটু। এ জন্য তিনি ব্যবহার করতেন ১৬টি মোবাইল ও ২৪টি সিম। সব সিম ও বিকাশ নম্বর রেজিস্ট্রেশনে তিনি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করেছেন। প্রতারণার অভিযোগে মঙ্গলবার তাকে পাবনার আমিনপুর থানার চক আবদুল শুকুর এলাকা থেকে রাজপাড়া থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। ফারুক হোসেনের বাড়ি চক আবদুল শুকুর গ্রামে। তিনি পাবনা কাজিরহাট উচ্চবিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এরপর ২০০১ সালে ঢাকায় গিয়ে সিকিউরিটি কোম্পানিতে ২০০৯ সাল পর্যন্ত চাকরি করেন।

এরপর তিন বছর পাবনায় থেকে ২০১২ সালে আবার ঢাকায় যান তিনি। ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্নস্থানে চা বিক্রি করেছেন। কিন্তু ২০১৭ সালের পর থেকে তিনি পুলিশ পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করেছেন।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক মাসুদ রানা আরএমপি সদর দফতরে অভিযোগ করেন যে, রাজপাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদ রানার পরিচয় দিয়ে চারটি মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে নগরীর ডাবতলার তিন ব্যক্তিকে ফোন করা হয়। ফোনে সংবাদপত্রে হারানো বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি তদন্ত, উদ্ধার ও উদ্ধারকরা ডকুমেন্ট পাঠানোর জন্য টাকা দাবি করে। পরে তারা থানায় অভিযোগ করলে দেখা যায় রাজপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক মাসুদ ও থানার কেউ বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না। তখন রাজপাড়া থানা পুলিশ মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটে নম্বরগুলো পাঠায়। নম্বরগুলো পাওয়ার পর ২১ দিন বিশ্লেষণ করে সাইবার ক্রাইম ইউনিট মিথ্যা পরিচয়দানকারী ব্যক্তিকে শনাক্ত করে। এরপর তাকে পাবনা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

ফারুক হোসেনকে গ্রেফতারের পর গতকাল দুপুরে রাজশাহী মহানগর পুলিশের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস, সাইবার ক্রাইম ইউনিটের প্রধান উৎপল চৌধুরী।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার বলেন, ফারুক হোসেন গত কয়েক বছর ধরে পুলিশের ওসি, এসআই পরিচয় দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করছেন। প্রতি মাসে কমপক্ষে ২০ জনের কাছ থেকে সারা দেশে এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে আরও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর