শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

বাড়তি করে বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের দাম

প্রতিকারের জন্য এনবিআরে চিঠি

রুহুল আমিন রাসেল

বাড়তি করের প্রভাবে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। জানা গেছে, স্থানীয় বাজার থেকে ঋণপত্র বা এলসি খুলে পণ্য কিনতে গিয়ে বাড়তি ২ শ্তাংশ কর পরিশোধ করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এতে দাম বাড়ছে চাল, গম, আলু, তেল, ডাল, পিঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, মরিচ, আটা, ময়দা, চিনি, গরম মসলা, ফল-ফলাদিসহ অন্যান্য পণ্যের। আবার চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া গম খালাসেও বাড়তি ৫ শ্তাংশ অগ্রিম আয়কর পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে বাড়ছে খরচ ও পণ্যমূল্য। ফলে বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার আশ্ঙ্কা জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরকে দুটি চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-সিসিসিআই। সিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির চলমান সমস্যা সমাধান চেয়ে এনবিআরে দুটি চিঠি দিলেও কোনো সমাধান এখন পর্যন্ত পাইনি। স্থানীয় ঋণপত্র বা অর্থায়ন চুক্তিমূল্যের ওপর ২ শ্তাংশ অগ্রিম আয়কর বা এআইটি আরোপ করা হচ্ছে পণ্য কেনার ওপরে। ফলে ১ কোটি টাকার পণ্য কিনতে ২ লাখ টাকা কর এবং অন্যান্য ফি-সহ প্রায় পৌনে ৩ লাখ টাকা বাড়তি খরচ হবে। এই কর বাতিল না হলে খরচ আরও বাড়বে। পণ্যমূল্যও বাড়বে। পক্ষান্তরে ভোক্তা বা সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়বে। জানা গেছে, স্থানীয় ঋণপত্র বা অর্থায়ন চুক্তিমূল্যের ওপর ২ শ্তাংশ কর আরোপ করে অর্থ আইন-২০২০ এ আনা সংশোধনী বাতিলের দাবি জানিয়ে গত ১৮ অক্টোবর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরকে চিঠি দেয় প্রাচীন বাণিজ্য সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-সিসিসিআই। সংগঠনটি বলেছে, আয়কর অধ্যাদেশে আনা সংশোধনী অনুসারে পণ্য ক্রয় বা সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে স্থানীয় ঋণপত্র বা অর্থায়ন চুক্তির মাধ্যমে পরিশোধিত অর্থের ওপর ২ শ্তাংশ হারে কর আরোপ করা হয়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে- চাল, গম, আলু, পিঁয়াজ, রসুন, মোটরশুটি, মোটর ডাল, মসুর ডাল, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, ডাল, ভুট্টা, আটা, ময়দা, লবণ, ভোজ্যতেল, চিনি, গোলমরিচ, দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, খেজুর, তেজপাতা, কম্পিউটার বা কম্পিউটারের আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি, পাট, তুলা, সুতা এবং সব ধরনের ফল-ফলাদি। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অর্থনীতি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে।

কর্মসংস্থান সংকট ও অর্থনৈতিক কর্মকা- স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসার কারণে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষ কষ্টেসৃষ্টে জীবনযাপন করছে। অতি সম্প্রতি পিঁয়াজ ও আলুর দামে ঊর্ধ্বগতি তাদের আরও সমস্যায় ফেলেছে। এমন প্রেক্ষাপটে উল্লিখিত ভোগ্যপণ্যের স্থানীয় ঋণপত্রের ক্ষেত্রে কর আরোপ করা হলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে; যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এ ধরনের পদক্ষেপে জনগণের ভোগান্তি আরও বহুগুণে বাড়বে। তাই ২ শ্তাংশ উৎসে করারোপ বাতিল করে বাজার স্থিতিশীল রাখা এবং ভোক্তাদের অতিরিক্ত আর্থিক চাপ থেকে রক্ষা করতে এনবিআরকে অনুরোধ করেছে চট্টগ্রাম চেম্বার।

এরআগে চট্টগ্রামে আমদানি হওয়া গমের চালানে ৫ শ্তাংশ অগ্রিম আয়কর আদায় না করে খালাস করতে গত ১২ অক্টোবর এনবিআরকে আরেকটি চিঠি দিয়েছে সিসিসিআই। এ চিঠিতে বলা হয়, সব ধরনের খাদ্য আমদানিতে কোনো ধরনের শুল্ককর না থাকলেও গম আমদানিতে ৫ শ্তাংশ অগ্রিম আয়কর বহাল রয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বেড়াজালে আমদানি হওয়া গমের লাখ লাখ টন খালাসের জন্য আটকে আছে। ফলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ক্ষতিপূরণ হিসেবে পরিশোধ করতে হচ্ছে। আবার ৫ শ্তাংশ অগ্রিম আয়করের কারণে খরচ বাড়ছে ব্যবসায়ীদের। এর ফলে এসব পণ্যের মূল্য অনেকাংশে বাড়বে এবং বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার আশ্ঙ্কা রয়েছে। বিশ্বাজারেও গমের দাম বাড়ছে। এদিকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে গম আমদানিতে কোনো ধরনের অগ্রিম আয়কর নেই। ফলে অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই করোনার মতো নাজুক পরিস্থিতিতে কোনোভাবে ৫ শ্তাংশ অগ্রিম আয়কর যৌক্তিক হবে না। তাই গম ও গম সংশ্লিষ্ট পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখা এবং ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষায় অগ্রিম আয়কর বাতিল করে দ্রুত পণ্য খালাসের দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম চেম্বার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর