রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় ঐতিহ্যের খাবার কটকটি বিক্রি অর্ধেকে

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

করোনায় ঐতিহ্যের খাবার কটকটি বিক্রি অর্ধেকে

বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী খাদ্যপণ্য ‘কটকটি’ নামের মধ্যেই শক্তভাব রয়েছে। অথচ এ খাবারটি শত শত বছর ধরেই বগুড়ার মহাস্থানগড়ে জমজমাট বিক্রি হয়ে আসছিল। বগুড়ার মহাস্থানগড়ের ইতিহাস-সমৃদ্ধ কটকটির দিন আর আগের মতো ভালো যাচ্ছে না। করোনাভাইরাসের কারণে মহাস্থানগড় দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ থাকায় বর্তমানে ভালো বিক্রি হচ্ছে না কটকটি। পর্যটক না থাকায় ঐতিহ্যবাহী কটকটি এখন প্রায় ক্রেতাশূন্য।  ইতিহাস পাঠে জানা যায়, বগুড়া শহর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তরে শিবগঞ্জ উপজেলার পাশেই পুন্ড্রনগর বা পুন্ড্রবর্ধন। যা পর্যায়ক্রমে মহাস্থানগড় নামে পরিচিত হয়েছে। মহাস্থান গড়ে হযরত শাহ সুলতান বলখী মাহীসওয়ার (রহ.) মাজার এলাকায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থকে প্রতিদিন হাজার হাজার লোকের আগমন ঘটত। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে বগুড়ার মহাস্থানগড় এখন বন্ধ। পর্যটকও নেই। করোনাভাইরাসের আগে পর্যটকদের কাছে মিষ্টান্ন হিসেবে কটকটি খাবার বেশ প্রসিদ্ধ ছিল। কিন্তু গত কয়েক মাসে এই মিষ্টান্ন খাবার কটকটি বিক্রেতাদের দিন ভালো যাচ্ছে না। মুখোরচক-লোভনীয় খাবার হিসেবে কটকটি অনেক জনপ্রিয় হলেও করোনার কারণে এখন এর বিক্রি কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। কটকটির কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথমে চালের গুঁড়ো করে আটা তৈরি করতে হয়। চালের আটার খামির করে চতুর্ভুজ আকারের ছোট ছোট টুকরা বানিয়ে তেলে ভেজে নিতে হয়। পরে অন্যান্য মসলায় মিশিয়ে জ্বাল দেওয়া গরম গুড়ের রসে ভিজিয়ে নিতে হয়। তারপর কিছুক্ষণ রেখে তা বাজারজাত করা হয়। তেলে ভাজার পরে শক্ত হলেও চালের আটা থাকায় সে শক্ত ভঙ্গুর ধরনের শক্ত। কিছু কটকটিতে খাবার রং দিয়ে লাল করা হয় আবার কোনোটায় রং মেশানো হয় না। চালের আটা দিয়ে এবং ময়দা বা আটা দিয়েও কটকটি তৈরি হয়ে থাকে। তবে চালের গুঁড়ার তৈরি কটকটির স্বাদ অতুলনীয়। যা স্থানীয় বাজারে ১৬০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হয়ে থাকে। প্রতিদিন শত শত কেজি কটকটি বিক্রি হয়ে থাকে। কিন্তু এখন তেমন বিক্রি হচ্ছে না। অর্ধেকে নেমেছে বিক্রি।

কারিগররা কটকটি তৈরি করতে পারলেও কবে কীভাবে এ কটকটির প্রচলন হলো তার সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। তবে স্থানীয়রা বলছেন, বগুড়ার সদর উপজেলার গোকুল ইউনিয়নের পলাশবাড়ী উত্তরপাড়া গ্রামের জয়নাল আলী ম-ল, ভোলা ম-ল ও গেদা ম-ল ঐতিহ্যবাহী এ কটকটি তৈরি করেছিলেন। যা প্রায় ১১০ থেকে ১২০ বছর আগের কথা। তাদের বংশধরদের মধ্যে ভোলা ম-লের ছেলে মুনছের আলী, জয়নাল ম-লের ছেলে বাবলু মিয়া, গেদা ম-লের ছেলে শাহাদত হোসেন, ঐতিহ্যবাহী এ কটকটির ব্যবসা অব্যাহত রেখেছেন। মহাস্থানগড় এলাকার সাইদুর রহমান সাজু জানান, বর্তমানে চালের কটকটি ১০০ টাকা, ঘিয়ে ভাজাগুলো ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

তবে আগের মতো আর বিক্রি হচ্ছে না। পর্যটক না থাকায় বিক্রি কমেছে।

মহাস্থানে ৩০-৪০টি কটকটির দোকান রয়েছে। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবারে হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (রহ.)-এর বিজয় দিবসে ১ থেকে ২ হাজার মণ বিভিন্ন প্রকার কটকটি বিক্রি হয়ে থাকে।  কিন্তু বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে কটকটির চাহিদা কমেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর