মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

এক সপ্তাহ ধরে আলু নেই বরিশালের আড়তে

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

এক সপ্তাহ ধরে আলু নেই বরিশালের আড়তে

বরিশালের পাইকারি বাজার আলু-শূন্য। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আলু নেই এখানকার আড়তে। দু-একটি আড়তে আলু থাকলেও গোপনে বিক্রি করা হচ্ছে চড়া দামে। তবে চড়া দামে আলু বিক্রির কোনো মেমো দেওয়া হচ্ছে না খুচরা দোকানিদের। খুচরা পর্যায়ের দোকানও আলু-শূন্য। গোপনে চড়া দামে যারা আলু কিনছেন তারাও বিক্রি করছেন ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে। তবে আলু সংকট অচিরেই কেটে যাবে বলে জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান। বরিশাল নগরীর পিঁয়াজপট্টির ৩৪টি আড়ত থেকে আলু, পিঁয়াজ, রসুন, আদাসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য সরবরাহ হয় খুচরা বাজারে। গতকাল পিঁয়াজপট্টির বিভিন্ন আড়তে গিয়ে আলু-শূন্য অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে চড়া দামে আলু বিক্রির অভিযোগে দুই আড়ত মালিককে জরিমানা করেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর থেকে আলু আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন তারা। পিঁয়াজপট্টির আড়তদার পায়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এনায়েত হোসেন খান জানান, বরিশালে তেমন আলু উৎপাদিত হয় না। এখানে নেই কোনো হিমাগারও। মুন্সীগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে সারা বছর আলু আসে বরিশালের আড়তে। এবার বন্যায় সবজির উৎপাদন কম হওয়ায় আলুর সংকট পড়েছে।  তিনি বলেন, মুন্সীগঞ্জ ও রাজশাহীর বিভিন্ন মোকামে পাইকারি প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৪ টাকা দরে। ট্রাক ভাড়া এবং পথে পথে চাঁদা দিতে গিয়ে প্রতি কেজি আলুতে খরচ পড়ে ২ টাকা। ৩৬ টাকা কেজি দরে আলু কিনে তারা কী করে সরকারের বেঁধে দেওয়া ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করবেন।

 এ কারণে তারা সাত দিন ধরে আলু আমদানি এবং বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। বরিশাল পিঁয়াজপট্টি আড়তদার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দুলাল মোল্লা বলেন, বরিশাল নগরীতে প্রতিদিন ১০ ট্রাক আলুর চাহিদা আছে। মোকামে চড়া দামে আলু কিনে পথের নানা খরচ পরিশোধ শেষে বরিশালের আড়তে পাইকারি পর্যায়ে ৩০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করা সম্ভব নয়। এ কারণে কোনো আড়তদার আলু আনছেন না। আড়তে আলু না থাকায় বিক্রিও হচ্ছে না।

আরেক আড়তদার জানান, পিঁয়াজপট্টির আড়তগুলো আলু, পিঁয়াজ, রসুন এবং আদার ওপর নির্ভরশীল। আলু না থাকায় পিঁয়াজ, রসুন এবং আদার বিক্রিও কমে গেছে। এ কারণে আড়তের শ্রমিকদের আয় কমে গেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পিঁয়াজপট্টির শ্রমিকরা আকালে রয়েছেন।

পাইকারি বাজার আলু-শূন্য হওয়ায় খুচরা পর্যায়ে অলিগলির দোকানেও আলু মিলছে না। কিন্তু আগে যাদের আলু মজুদ করা ছিল তারা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করছেন।

নগরীর সাগরদী বাজারের মুদি দোকানি মো. সাদী বলেন, পিঁয়াজপট্টির দু-একটি আড়তে আগের কেনা আলু আছে। তারা অজ্ঞাত স্থানে আলু মজুদ করে রেখেছেন। চড়া দামে আলু বিক্রি করছেন তারা। তবে খুচরা দোকানিদের তারা কোনো রসিদ দিচ্ছেন না।

জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা এ এস এম হাসান সারোয়ার শিবলী বলেন, এ বছর আলুর সংকট রয়েছে। এই মুহূর্তে যাদের কাছে আলু আছে তারা সরকার নির্ধারিত দাম মানছে না। আড়তদাররাও ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয়ে আলু আনছেন না। বরিশালের আড়তে আলু নেই স্বীকার করেন তিনি। কিছু মজুদ থাকলেও তা সরিয়ে রাখা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন, সংকট নিরসনে সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে আলু আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অচিরেই বিভিন্ন দেশের আলু এসে যাবে। তখন সংকট কেটে যাবে। তবে কোনোভাবেই সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে আলু বিক্রি করা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর