বুধবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

এনজিও নির্বাচনে অভিজ্ঞদের বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

ভিজিডি প্রকল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভিজিডি প্রকল্পে (ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট) উন্নয়ন প্যাকেজ সেবা প্রদানের জন্য এনজিও নির্বাচনের নামে অভিজ্ঞ এনজিওদের বাদ দিয়ে অনভিজ্ঞদের নিয়োগ এবং প্রকল্পের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র চলছে। একটি মহল এই প্যাকেজ সেবা কার্যক্রম বাস্তবায়নে ক্ষুদ্র  ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগের চেষ্টা চালাচ্ছে।

মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪ হাজার ৫৭৯টি ইউনিয়ন পরিষদের ১০ লাখ ৪০ হাজার ভিজিডি প্রকল্পের উপকারভোগীকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে প্যাকেটজাত চাল প্রদান করা হয়। উন্নয়ন প্যাকেজ সেবা প্রদানের জন্য গত দশ বছর যাবত মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অধিকারভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনাকারী এনজিও নির্বাচন করা হয়। নির্বাচিত এনজিওদের কাজ উপকারভোগীদের মাঝে সঞ্চয় অভ্যাস গড়ে তোলা, মানব উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ ও দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা। গত দশ বছরের সেই ধারা ভাঙতে এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে সফল প্রকল্প বাধাগ্রস্ত করতে একটি চক্র উঠেপড়ে লেগেছে। সম্প্রতি উন্নয়ন প্যাকেজ সেবা প্রদানের জন্য এনজিও নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই বিজ্ঞাপনে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির সনদ আবশ্যক, ত্রিশ লাখ টাকার ব্যাংক প্রত্যয়নপত্র, পিকেএসএফ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের  ঋণখেলাপি নয় মর্মে প্রত্যয়নপত্র জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া আরও কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে যা প্রকল্পের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যেখানে উপকারভোগীদের এনজিওদের পক্ষ থেকে ঋণ দেওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই সেখানে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির সনদ অনাবশ্যক, আবার এনজিওদের আর্থিক কোনো সম্পৃক্ততা নেই সেখানে ত্রিশ লাখ টাকার ব্যাংক প্রত্যয়নপত্রও অনাবশ্যক। এমনকি যেসব এনজিও পিকেএসএফ বা  বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো দিন ঋণ নেয়নি সেসব এনজিওকে ঋণখেলাপি নয় মর্মে প্রত্যয়নপত্র দেওয়া অযৌক্তিক। এনজিও নির্বাচনে এ ধরনের শর্ত আরোপ করা হচ্ছে মর্মে এনজিওরা জানতে পেরে গত ১ সেপ্টেম্বর মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সচিব, মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের মহাপরিচালক ও পরিচালককে চিঠি দিয়ে এসব অযৌক্তিক শর্ত আরোপ করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানায়। প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাকেও বিষয়টি জানালে তিনি এ ধরনের শর্ত আরোপ করা হবে না বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু গত ১৫ সেপ্টেম্বর শিশু একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ভিজিডি কর্মসূচির কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সভায় কতিপয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যা প্রকল্পের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ওই সভায়ই প্রতিমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে এনজিও কমিয়ে আনার অজুহাতে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এনজিওদের সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিজ ইন বাংলাদেশ (এডাব)-এর পরিচালক এ কে এম জসীম উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত ১০ বছর থেকে দেশের ছোট ছোট এনজিওরা মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের এ প্রকল্পটি সফলভাবে করে আসছে। যেহেতু এখানে কোনো ঋণ কার্যক্রমের বিষয় নেই বা এনজিওদের আর্থিক কোনো সম্পৃক্ততা নেই তাই এমআরএ সনদ, ১ লাখ টাকা জামানত, ৩% পারফরম্যান্স সিকিউরিটি ও ত্রিশ লাখ টাকার ব্যাংক ম্যানেজারের প্রত্যয়ন অগ্রহণযোগ্য। এসব শর্ত শিথিল করে যাতে দেশের ছোট ছোট এনজিওরা প্রকল্পটিতে অংশগ্রহণ করতে পারে তার ব্যবস্থা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা, মহিলাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের মহাপরিচালক, পরিচালক ও এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালককে এডাবের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এনজিও এইড অর্গানাইজেশনের নির্বাহী পরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, যেখানে এনজিওদের আর্থিক সংশ্লিষ্টতা নেই সেখানে এ ধরনের শর্ত আরোপ করে এনজিওদের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি করার এক শ্রেণির আমলার অপকৌশল ছাড়া কিছুই নয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর