শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

মেঘনায় বালুবাহী বাল্কহেড থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজি!

রাহাত খান, বরিশাল

মেঘনা নদীর চাঁদপুরের হরিণা ফেরিঘাট ও আলুবাজার পয়েন্টে বালুবাহী বাল্কহেড থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। চাঁদা না দিলে প্রতিনিয়ত হামলার শিকার হচ্ছেন বালুবাহী বাল্কহেডের শ্রমিকরা। সব শেষ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চাঁদার দাবিতে বরিশালগামী বালুবাহী দুটি বাল্কহেডের ১০ শ্রমিককে মারধর করে দুই ঘণ্টা জিম্মি করে রাখে তারা। পরে জরুরি সেবা হটলাইন ৯৯৯-এ ফোন করে ছাড়া পেয়েছেন তারা। হামলা ও চাঁদাবাজির শিকার বাল্কহেড মালিক-শ্রমিকরা জানান, চাঁদপুরের ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সেলিম খান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে জিম্মি মেঘনা নদী দিয়ে বালু পরিবহনকারীরা। প্রতিটি বাল্কহেড থেকে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা নিচ্ছে তারা। প্রতিদিন বালুবাহী প্রায় ১০০ বাল্কহেড থেকে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। অবশ্য চেয়ারম্যান সেলিম খান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বরিশালের বাল্কহেড মালিক মো. কামরুল জানান, বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে বালু আসে নৌপথে রাজবাড়ী জেলার পাকশি থেকে। পথে চাঁদপুরের হরিণা ফেরিঘাট ও আলু বাজার সংলগ্ন মেঘনা নদীতে ট্রলার ও স্পিডবোটযোগে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদ      চেয়ারম্যান সেলিম খান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা হানা দিয়ে প্রতিটি বাল্কহেড থেকে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে বাল্কহেড শ্রমিকদের মারধর মুঠোফোন ও টাকাসহ মূল্যবান মালামাল নিয়ে যায়। অনেক সময় বাল্কহেড আটকে রাখে এবং বালু নদীতে ফেল দেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। বাল্কহেড মালিক হুমায়ুন কবির জানান, চাঁদা না দেওয়ায় গত ১৫ জুন বিকালে মেঘনার হরিণা ফেরিঘাট বরিশালগামী এমভি এসএম মোল্লা এবং এমভি নববন্ধন নামের বালুবাহী দুটি বাল্কহেডের কেরানি, সুকানিসহ শ্রমিকদের মারধর করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান এবং তার সহযোগীরা। এ সময় নিয়মিত চাঁদা না দিলে বালুসহ বাল্কহেড ডুবিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় তারা। গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় মেঘনার হরিনা ফেরিঘাট আলুবাজার পয়েন্টে বরিশালগামী এমভি মা জান্নাতুল-১ ও এমভি মা জান্নাতুল-২ নামে দুটি বাল্কহেড আটক করে চেয়ারম্যান সেলিম খানের বাহিনী। এ সময় তাদের চাঁদা না দেওয়ায় দুই বাল্কহেডের সুকানি আবদুস সালাম ও শাহজাহান, মিস্ত্রি শমসের, রুবেল, শ্রমিক রমজান, দুলাল, রুম্মান ও শামীমসহ ১০ জনকে মারধর এবং বাল্কহেড আটকে রাখে। খবর পেয়ে বাল্কহেড মালিক মো. জাহিদ ও মো. জব্বার মিয়া জরুরি সেবা হটলাইন ৯৯৯-এ ফোন করে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় বাল্কহেড দুটি সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে মুক্ত করেন। বাল্কহেড শ্রমিকরা জানান, সেলিম চেয়ারম্যানের বেপরোয়া চাঁদাবাজি এবং নির্যাতনের কারণে মেঘনা নদী দিয়ে বালু পরিবহন বন্ধের উপক্রম। বালু পরিবহন বন্ধ হয়ে গেলে দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন। বরিশাল বালুশূন্য হয়ে পড়লে এ অঞ্চলে নির্মাণকাজও ব্যাহত হবে। অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে চাঁদপুরের ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সেলিম খান বলেন, ‘ভাত খাওয়ার সময় পাই না। নদীতে যাব চাঁদাবাজি করতে।

আপনার সঙ্গে বেশি কথা বলার সময় নাই’ বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি। 

চাঁদপুর নৌপুলিশের অতিরিক্ত সুপার বেলায়েত হোসেন বলেন, মেঘনার আলুবাজার কিংবা হরিণা ফেরিঘাট পয়েন্টে বালুবাহী নৌযানে চাঁদাবাজির কোনো খবর তারা জানেন না। কেউ অভিযোগ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে নৌ পুলিশ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর