সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ফের তৎপর মানব পাচার চক্র

বিভিন্ন দেশে আটকে পড়াদের মানবেতর জীবনযাপন

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

ফের তৎপর মানব পাচার চক্র

সিলেটে ফের তৎপর হয়ে উঠেছে মানব পাচারকারী চক্র। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বৈধ ও অবৈধভাবে লোক পাঠানোর নামে চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। দালালের প্ররোচনায় অবৈধভাবে ইউরোপে ঢুকতে গিয়ে বিভিন্ন দেশের সীমান্তে আটকা পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকে। দালালের খপ্পরে পড়ে অনেকে হয়েছেন সর্বস্বান্ত। বিভিন্ন দেশে নিয়ে জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে দালালরা আদায় করছে টাকা। বৈরী আবহাওয়া ও নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। সিলেট ও প্রবাসে এ রকম অন্তত ১০টি সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে ট্রাভেলস ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে। ওয়ার্কপারমিটে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ইতালিতে জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় সিলেটে সক্রিয় হয়ে উঠেছে মানব পাচারকারী চক্র। ইতালিতে লোক পাঠানোর নিশ্চয়তা দিয়ে তারা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ইতালিতে যাওয়ার জন্য আগ্রহীদের সঙ্গে ১০-১৫ লাখ টাকার চুক্তি করছে তারা। বুকিং মানি হিসেবে তারা নিচ্ছে ৪-৫ লাখ টাকা। বাকি টাকা বিভিন্ন ধাপে পরিশোধের কথা বলে লিখিত চুক্তি করছে ওই চক্রের সদস্যরা। এ ছাড়া কানাডায় লোক পাঠানোর নামেও ওই চক্রগুলো আগ্রহীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ট্রাভেলস ও কনসালটেন্সি ব্যবসার আড়ালে চলছে মানব পাচারের এই ব্যবসা। ২০১৯ সালের মে মাসে দালালের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ ঘুরে লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করছিল বেশ কিছু সংখ্যক অভিবাসী। ওই সময় ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে মারা যান ৪০ জন বাংলাদেশি। এর মধ্যে ২২ জনই ছিলেন সিলেটের। এ ঘটনার পর সিলেটে মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেফতারও হন অন্তত ২০ জন মানব পাচারকারী। কিন্তু অভিযান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে ওই চক্রের সদস্যরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চক্রটি প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট বিভাগের সচ্ছল বেকার যুবকদের প্রথমে টার্গেট করে। পরে লোক পাঠিয়ে নানা প্রলোভন দিয়ে তারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। কেউ সেই প্রস্তাব গ্রহণ করলে প্রথমেই বুকিং মানি হিসেবে হাতিয়ে নেয় ৪-৫ লাখ টাকা। বাকি ৮-১০ লাখ টাকা ধাপে ধাপে পরিশোধের জন্য লিখিত চুক্তি করে। এ ছাড়া প্রবাসে অবস্থানরত বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদেরও টার্গেট করে এই চক্রটি। মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিভিন্ন রুট ব্যবহার করে তারা ইউরোপে পাঠানোর নাম করে প্রবাসীদের সঙ্গে চুক্তি করে। পরে তাদের অবৈধভাবে বিভিন্ন দেশে নিয়ে জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে।  এদিকে মানব পাচারকারী চক্রের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন সিলেটের প্রকৃত ট্রাভেল ব্যবসায়ীরা।

এ ব্যাপারে আটাব সিলেট অঞ্চলের সাবেক সভাপতি আবদুল জব্বার জলিল বলেন, ‘কিছুদিন বন্ধ থাকলেও সিলেটে আবারও বেড়েছে মানব পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য। তারা এখন প্রকাশ্যে মানব পাচারের বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যবসা করছে।

সম্প্রতি সিলেট সফরে এসে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদও বিদেশ যেতে দালালদের প্রলোভনের ফাঁদে যেন কেউ পা না দেন  সেই আহ্বান জানিয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর