মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

আসামির স্বীকারোক্তিতে পুলিশের নাম, তদন্ত করছে জেলা পুলিশও

রাজশাহীর রফিকুল হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে রফিকুল ইসলাম (৩২) নামের এক ব্যক্তিকে হত্যায় জড়িত বলে ৫ পুলিশ সদস্যের নাম আসে এক আসামির জবানবন্দিতে। এরপরই হত্যাকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে পুলিশের পাঁচ সদস্যের ব্যাপারে তদন্ত শুরু হয়েছে। মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে। রাজশাহী জেলা পুলিশও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি আলাদা করে তদন্ত করে দেখছে। খুনের অভিযোগ ওঠা পাঁচজন হলেন- পুলিশের উপ-পরিদর্শক মিজানুর রহমান, আবদুল মান্নান ও রেজাউল ইসলাম এবং কনস্টেবল শাহাদাত হোসেন ও শফিকুল ইসলাম। গত মার্চ মাসে রফিকুল খুনের সময় তারা গোদাগাড়ী মডেল থানায় কর্মরত ছিলেন। নিহত রফিকুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার পোলাডাঙ্গা গাইনাপাড়া গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে। ২২ মার্চ গোদাগাড়ীর মাটিকাটা দেওয়ানপাড়া এলাকার পদ্মার চর থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি বজ্রপাতে মারা গেছেন বলে তখন প্রচার চালানো হয়। সেদিনই থানায় অপমৃত্যুর মামলা করা হয়।

পরে ১৭ জুন নিহতের স্ত্রী রুমিসা খাতুন বাদী হয়ে শরিফুল ইসলাম (৩২) ও জামাল উদ্দিন (৩২) নামে দুজনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করেন। এদের মধ্যে শরিফুল নিহত রফিকুলের সঙ্গে সীমান্ত থেকে হেরোইন নিয়ে এসেছিলেন। যে রাতে রফিকুল খুন হন পুলিশ তাকে সে রাতেই হেরোইনসহ গ্রেফতার দেখায়। ওই মামলায় রফিকুলকে পলাতক আসামি দেখানো হয়েছিল। রফিকুল হত্যা মামলাতেও শরিফুলকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

হত্যা মামলা দায়েরের এক মাসের মধ্যেই পিবিআই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্তভার গ্রহণ করে। বর্তমানে রাজশাহী পিবিআইর এসআই জামাল উদ্দিন মামলাটির তদন্ত করছেন।

 গত ২৯ অক্টোবর তিনি এ মামলায় ইসাহাক আলী ইসা (২৮), ফরিদুল ইসলাম (২৫) এবং মাহাবুর আলী (৩১)-কে গ্রেফতার করে। পরদিন ইসা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ইসা তার জবানবন্দিতে বলেছেন, তার ৫০০ গ্রামের একটি হেরোইনের চালান নিয়ে আসছিলেন রফিকুল ও শরিফুল। তিনিই ২ লাখ টাকার বিনিময়ে চালানটি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশের সঙ্গে চুক্তি করেন। পরে রফিকুল ও জামাল যখন তার হেরোইন নিয়ে আসছিলেন তখন ইসা এসআই মিজানুর, আবদুল মান্নান, রেজাউল ইসলাম এবং কনস্টেবল শফিকুল ও শাহাদাতকে নিয়ে মাটিকাটা দেওয়ানপাড়া সিঁড়িঘাট এলাকায় তাদের ধরে ফেলে। মারধরে রফিকুল মারা গেলে পুলিশ চরে তার লাশ ফেলে আসে। আর রফিকুলের সঙ্গে থাকা জামালকে এনে ১০০ গ্রাম হেরোইনের মামলা দিয়ে অবশিষ্ট ৪০০ গ্রাম পুলিশ আত্মসাৎ করে।

তার এমন স্বীকারোক্তির বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মতিউর রহমান সিদ্দিকীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দিয়েছেন। তদন্ত কমিটির প্রধান মতিউর রহমান সিদ্দিকী বলেন, আদালতে কী জবানবন্দি হয়েছে তারা সেটি জানেন না। বিষয়টি তদন্ত সংস্থা তদন্ত করে দেখবে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর উপ-পরিদর্শক জামাল উদ্দিন বলেন, আসামিদের আদালতে তোলার আগে যেসব তথ্য তাদের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছিল তিনি সেসব বিষয় যাচাই-বাছাই করে দেখছেন।

সর্বশেষ খবর