বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

মাদক মামলার বিচার এখতিয়ার সম্পন্ন কোর্টে করার বিল চূড়ান্ত

ইয়াবার সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ডের বিধান বহাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

মাদকদ্রব্য অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠনে প্রশাসনিক জটিলতার কারণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধন) করে অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী ‘এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে’ মাদক মামলার বিচার করার বিধান রেখে সংসদীয় কমিটি ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধন), ২০২০’ বিল চূড়ান্ত করেছে। সংশোধিত আইনে দেশে ইয়াবার উৎপাদন, পরিবহন, বিপণনের জন্য সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ডের বিধান বহাল রাখা হয়েছে। জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিল-২০১৮’ গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর কার্যকর হয়। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতার কারণে মাদকদ্রব্য অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যায়নি।

 ফলে জমে যাওয়া মামলা দ্রুত বিচারের জন্য আইনের বিচার প্রক্রিয়ার ধারায় সংশোধনী আনা হয়। সংসদ ভবনে গতকাল অনুষ্ঠিত ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৩তম বৈঠকে বিলের ওপর বিস্তারিত আলোচনা শেষে কমিটি বিলটি চূড়ান্ত করে সংশোধিত আকারে সংসদে বিলের রিপোর্ট প্রদানের সুপারিশ করে।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি মো. শামসুল হক টুকু। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মো. হাবিবর রহমান, সামছুল আলম দুদু, ফরিদুল হক খান, পীর ফজলুর রহমান, নূর মোহাম্মদ এবং সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। 

গত ৮ নভেম্বর মাদক সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ (সংশোধন) বিল-২০২০’ উত্থাপন করা হয়। বিলটি উত্থাপনকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদকে জানান, শুধু ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে গেলে দীর্ঘ সময় লাগে। নিষ্পত্তি এবং আপিলের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়, তাই আইনটি সংশোধন করা হচ্ছে।

বৈঠক শেষে কমিটি সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিদ্যমান আইন বলে সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন দিয়ে বলেছিল প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করবে। আর ট্রাইব্যুনাল স্থাপিত না হওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে এ মামলা নিষ্পত্তি করবেন। কিন্তু প্রশাসনিক কারণে মাদকদ্রব্য অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন বা জেলা বা দায়রা জজকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ওই ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব দেওয়া যায়নি। এতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে অসংখ্য মাদক অপরাধ সংক্রান্ত মামলা হলেও তা বিচারের মাধ্যমে নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছিল। প্রতিনিয়ত মামলার সংখ্যাও বাড়ছে। তাই প্রস্তাবিত আইনে একটি সংশোধনী এনে অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী ‘এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত’-এর মাধ্যমে মামলাগুলো বিচারকাজ সম্পন্ন করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

সংশোধিত আইনের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত আইনের অধীন মাদকদ্রব্য অপরাধসমূহ অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী ‘এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত’ কর্তৃক বিচার্য হবে। সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ দায়রা জজ, মহানগর দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা চিফ  মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট উহার এখতিয়ারাধীন এলাকার জন্য কেবল মাদকদ্রব্য অপরাধের বিচারের জন্য প্রয়োজন এক বা একাধিক এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত নির্দিষ্ট করবেন। ফলে মাদক অপরাধের মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তি হবে।

বিলে বলা হয়েছে, এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতকে মামলা প্রাপ্তির তারিখ  থেকে ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে। কেউ আপিল করতে চাইলে রায় দেওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তা করতে হবে।

বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, সুরক্ষা  সেবা বিভাগের সচিব, দুই বিভাগের অধীনস্থ সংস্থা প্রধান, আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর