সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

দুর্নীতিতে চিকিৎসা ব্যয় বেড়েছে ৭০ ভাগ

স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের গবেষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

দুর্নীতিতে চিকিৎসা ব্যয় বেড়েছে ৭০ ভাগ

দেশে চিকিৎসায় ব্যয় কমার পরিবর্তে বাড়ছে। চিকিৎসকদের সহমর্মিতায় ঘাটতি থাকায় অনেকে বিদেশমুখী। গবেষণার তথ্য দিয়ে এমন কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট। ‘বাংলাদেশ ডিজিস স্পেসিফিক অ্যাকাউন্টস’ এর অবহিতকরণ কর্মশালায় বলা হয়, চিকিৎসা গ্রহণে জনগণের খরচ কমিয়ে আনতে হলে স্বাস্থ্য খাতে সম্পদের সঠিক ব্যবহার প্রয়োজন।দেশের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০১২ সালে দেশে জনপ্রতি চিকিৎসা ব্যয় ছিল ৩৭ ডলার। এরমধ্যে সরকার বহন করে ৯ ডলার ও বিভিন্ন দাতা সংস্থা ৪ ডলার। বাকি ২৪ ডলারই খরচ হয় জনগণের পকেট থেকে। শতকরা হিসেবে যা ৬৭ শতাংশ। গবেষণায় বলা হচ্ছে, চিকিৎসা সেবায় সাধারণ মানুষের খরচ কমিয়ে আনতে হাতে নেওয়া পরিকল্পনাগুলোয় ঘাটতি ও বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতির কারণে গত ১০ বছরে সেই ব্যয় না কমে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ শতাংশে। যারা একাধিক রোগে আক্রান্ত, তাদের চিকিৎসার পেছনে খরচ করতে হয় আরও বেশি অর্থ। ফলে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে রোগীদের অনেকেই নিঃস্ব হচ্ছেন। গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশের চিকিৎসকদের রোগীর প্রতি সহমর্মিতাতেও ঘাটতি আছে। তাই চিকিৎসকদের ওপর আস্থা হারিয়ে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে আট হাজার মানুষ চিকিৎসা নিতে ভারতমুখী হচ্ছেন। স্বাস্থ্য খাতে সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে, সেবা গ্রহীতার সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি অর্জন করা গেলে, নিশ্চিত হবে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা-এমনটাই মনে করছে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. গোপেন্দ্র নাথ আচার্য্যর সভাপতিত্বে অবহিতকরণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মো. শাহাদৎ হোসেন মাহমুদ। এছাড়াও কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের উপপরিচালক (সিনিয়র সহকারী সচিব) ফাতেমা জোহরা, ডাটা ইন্টারন্যাশনাল পরিচালক এএফএম আজিজুর, বিভাগের বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জন, হাসপাতালের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা। কর্মশালায় বক্তারা জানান, স্বাস্থ্যখাতে জনগণের পকেট থেকে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়। এই ব্যয় কমিয়ে বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের জন্য এগিয়ে আসতে হবে। কোভিড ১৯-এর প্রভাবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে যে জরুরি এবং অপ্রত্যাশিত আর্থিক প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, তা মেটাতে বিভিন্ন কৌশলে অর্থবছরের বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে স্বাস্থ্য খাতে এতদিন কতটা কম মনোযোগ দেয়া হয়েছে। তাই আগামীতে বড় ধরনের সংস্কার করে এলাকাভিক্তিক বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।

বক্তারা আরও জানান, স্বাস্থ্য সেবায় দেশের নাগরিকদের সবসময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। জনগণের কাছ থেকে কম খরচ করা হয়। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই আমাদরে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশে চিকিৎসা জনিত কারণে খরচ হচ্ছে জন প্রতি ৩৭ ডলার। এই ৩৭ ডলারের মধ্যে সরকার মাত্র ৯ ডলার খরচ করে। বাকি ৪ ডলার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিভিন্ন ইউনিট খরচ করে থাকে। আর জনগণের পকেট থেকে ২৪ ডলার খরচ করতে হয়। মোট যে খরচ হয় তার ৬৭ শতাংশ জনগণ খরচ করে থাকেন। এই ব্যয়ের মূল কারণ আমাদের সঠিক পদক্ষেপের অভাব।

কারণ হিসাবে উল্লেখ করে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা জানান, চিকিৎসকদের বেতন ভাতায় বেশি বরাদ্দ হলেও স্বা¯'্যখাতের উন্নয়নে তেমন বাড়েনি। তাই আগামীতে সঠিক পরিকল্পনায় কাজ করতে হবে। এজন্য আঞ্চলভিত্তিক বাজেট বাস্তবায়ন করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর