সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

অগ্রহায়ণ ঘিরে ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব

নজরুল মৃধা, রংপুর

অগ্রহায়ণ ঘিরে ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব

আজ পয়লা অগ্রহায়ণ। কৃষকের ঘরে ঘরে আমন ধান কাটা ও মাড়াই পুরোদমে শুরু হওয়ায় নবান্ন উৎসব শুরু হয়েছে। এবার বাজারে ধানের দাম বাড়তি থাকায় ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন কৃষক। নবান্ন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি প্রচীন প্রথা হলেও এটি বাঙালি কৃষকদের ঘরে ঘরে সমাদৃত। নবান্ন অনুষ্ঠানে নতুন অন্ন পিতৃপুরুষ, দেবতা, কাক ইত্যাদি প্রাণীকে উৎসর্গ করে এবং আত্মীয়-স্বজনকে পরিবেশন করার পর গৃহকর্তা ও পরিবারবর্গ নতুন গুড়সহ নতুন অন্ন গ্রহণ করেন। নতুন চালের তৈরি খাদ্যসামগ্রী কাককে নিবেদন করা নবান্নের বিশেষ লৌকিক প্রথা। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী কাকের মাধ্যমে ওই খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌঁছে যায়। এসব ভাবনা থেকে নবান্ন উৎসবের সূচনা হলেও এটি এখন বাঙালির চিরায়ত উৎসবে পরিণত হয়েছে। কৃষক ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন নবান্ন উৎসব নানা আনুষ্ঠানিকতায় পালন করে থাকেন।

রংপুর সদর উপজেলার পূর্ব ফকিরানী গ্রামের ধনরাম চার একর জমিতে আমন ধান আবাদ করেছেন। গতকাল পর্যন্ত প্রায় তিন বিঘা জমির ধান কেটে ঘরে  তোলেন। পয়লা অগ্রহায়ণ তিনি নবান্ন করবেন। এ উপলক্ষে তিনি আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধবকে নিমন্ত্রণ করেছেন। তিনি জানান, বাড়ির কর্তা হিসেবে তিনি ২ দিন আগে সকাল বেলা স্নান সেরে পবিত্র হয়ে বাম হাত দিয়ে এক মুঠি ধান কর্তন করে নবান্নের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের হাবু গ্রামের কমল রায় পাঁচ বিঘা জমির আমন ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। ওই জমিতে তিনি এখন আলু রোপণের প্রস্তুতি নিয়েছেন। তিনি জানান, পয়লা অগ্রহায়ণ নবান্ন উপলক্ষে বাপ-দাদারা যে আচার অনুষ্ঠান করতেন তা তিনি ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। কাউনিয়া উপজেলার আফজাল, পীরগাছার বুলবুল চার দিন আগে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান করে ধান গোলায় তুলেছেন। তারাও নবান্ন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়েছেন। তারা জানান, বন্যায় ফসলের কিছুটা ক্ষতি এবং করোনার কারণে আগের মতো না হলেও সীমিত পরিসরে নবান্নের আয়োজন করেছেন। যারা এখনো কাটা-মাড়াই করতে পারেননি তারাও তোড়জোড় শুরু করেছেন। দু-চার দিনের মধ্যে তারা ধান কাটা শুরু করবেন। এ অঞ্চলের আমনচাষির চোখে-মুখে এখন খুশির ঝিলিক বয়ে যাচ্ছে। তাদের অনেকেই নবান্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ধান কাটার প্রস্তুতি নিয়েছেন।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় আমান আবাদ হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৫ হাজার হেক্টর।  উৎপাদন হয়েছে  ১৬ লাখ ৯৭ হাজার মেট্রিক টনের বেশি।  প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন ধরা হয়েছে ২ দশমিক ৮১ মেট্রিক টন। এই অঞ্চলে ৪ দফা বন্যায় ১৪ হাজার হেক্টরের বেশি ধানের ক্ষতি হয়েছে। কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা ও মাড়াই হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর