ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী উপজেলা হালুয়াঘাট। গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এ উপজেলা চোরাকারবারিদের জন্য নিরাপদ রুট। আর এ পথেই পাচার হতো মানবদেহের পূর্ণাঙ্গ কঙ্কাল। গত রবিবারও ভারতে মানবদেহের বিভিন্ন অংশ পাচারের পরিকল্পনা ছিল একটি চক্রের। মানুষের ১২টি মাথার খুলি ও দুই বস্তা হাড়গোড়সহ ময়মনসিংহ মহানগরের আর কে মিশন রোডের ‘আশানীড়’ ভবন থেকে বাপ্পি নামে এক যুবককে গ্রেফতারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে আসে। এসব কঙ্কাল ভারত হয়ে চলে যেত নেপালেও। তবে সবকিছু পাচারের জন্য প্রস্তুত থাকলেও সে পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে পুলিশ। আটক বাপ্পির বরাত দিয়ে গণমাধ্যমকে এসব জানিয়েছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার। তিনি জানান, রবিবার রাতে বাপ্পির সঙ্গে শাকিল নামে একজনের উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও তিন-চার জনকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। চক্রটিকে আটকে পুলিশের অভিযান চলছে। ওসি আরও জানান, জেলার বিভিন্ন কবরস্থান থেকে লাশ চুরি করে বাপ্পির কাছে পাঠাতেন লাশ চোর চক্রের সদস্যরা। পরে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে নিজের বাসায়ই কঙ্কাল রাখতেন বাপ্পি। সেখান থেকে বিক্রি করা হতো দেশের বিভিন্ন স্থানে। অভিযানে থাকা মহানগরের ৩ নম্বর ফাঁড়ির এসআই রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘বস্তা ও কার্টনভর্তি মানুষের মাথার খুলি ও হাড় দেখে আমরা তো অবাক! কার্টন থেকে একে একে বের হয় ১২টি মাথার খুলি ও দুই বস্তা হাড়। সেই সঙ্গে পাওয়া যায় রাসায়নিক দ্রব্য; যা দিয়ে মানবদেহ দ্রুত পচানো ও কঙ্কাল প্রক্রিয়াজাত করা হতো।’
ওসি তদন্ত ফারুক হোসেন জানান, আজ (সোমবার) দুপুরে আসামি বাপ্পিকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে তোলা হবে।
জেলা পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান জানান, দেশের মধ্যে বাপ্পি এসব কঙ্কাল বিক্রি করতেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। আর সীমান্ত দিয়ে পাশের দেশে পাচারের বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে। বিজ্ঞ আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করলে এ বিষয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।জানতে চাইলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে, যা আমরা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখার চেষ্টা করছি। তবে অনেক সীমান্তেই চোরাচালান হচ্ছে যা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। আর হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে কঙ্কাল পাচারের বিষয়টি এখনো আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।’