মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

চলে গেলেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলে গেলেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী

জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি, শরীয়তপুর-২ আসন থেকে নির্বাচিত ছয়বারের সংসদ সদস্য, স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) শওকত আলী  ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রাজধানীর      সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে, ১ মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন। তিনি নবম জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচরের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। শওকত আলী কিডনি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। এসব কারণে বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকার সিএমএইচে চিকিৎসা নিতে হচ্ছিল তাকে।

আজ মঙ্গলবার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়ায় তাকে দাফন করা হবে। গতকাল বাদ আসর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্রলীগ, জাসদ, সিপিবি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানকে। গতকাল সকালে তার মৃত্যুর সংবাদ শুনে সিএমএইচে ছুটে যান শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম। শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার লোনসিং বাহের দিঘীরপাড় গ্রামে ১৯৩৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন শওকত আলী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি নেওয়ার পর ১৯৫৯ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন পান। পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হয়েছিল, তাতে শওকত আলীকে ২৬ নম্বর আসামি করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১০ জানুয়ারি ক্যাপ্টেন পদে থাকা অবস্থায় তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে ক্যান্টনমেন্ট থেকে আটক করার পর ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। শওকত আলী ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নেন। স্বাধীনতার পর আবার সেনাবাহিনীতে ফেরেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর কর্নেল শওকত আলীকে সেনাবাহিনী থেকে অবসরে পাঠানো হয়। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং ১৯৭৯ সালে শরীয়তপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

 সে সময় আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের হুইপের দায়িত্ব পান তিনি। সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী শরীয়তপুরের ওই আসনটি থেকে মোট ছয়বার এমপি হয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নবম সংসদে যখন স্পিকার ছিলেন, তখন শওকত আলী ছিলেন ডেপুটি স্পিকার। দশম সংসদে তাকে সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শওকত আলী ৭১ ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন।

আজ সকালে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়ায় তার গ্রামের বাড়িতে। নড়িয়া শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষে জোহরের নামাজের পর নড়িয়া বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ে তার আরেক দফা জানাজা হবে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে নিজের বাড়ি ‘স্বাধীনতা ভবন’ এর আঙিনায় দাফন করা হবে শওকত আলীকে।

জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক শোকবার্তায় বলেছেন, ‘মরহুম শওকত আলী বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে আজীবন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে কাজ করে গেছেন। তিনি একজন সামরিক অফিসার হওয়া সত্ত্বেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য যে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন, তা অতুলনীয়।’

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক শোকবার্তায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সংসদীয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে শওকত আলীর অবদান জাতি সবসময় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। দেশ এক প্রবীণ জননেতাকে হারাল, আমি হারালাম বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন বিশ্বস্ত সহকর্মীকে।’ 

শওকত আলীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, এইচ টি ইমাম, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া প্রমুখ। এ ছাড়া শোক প্রকাশ করেছেন  কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান। সরকারের মন্ত্রী ও নেতাদের মধ্যে শোক জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এম আবদুল মোমেন, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সাংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা, হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন প্রমুখ। আরও শোক জানিয়েছেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, গণতন্ত্রী পার্টির ব্যারিস্টার আরশ আলী, প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুর রহমান সেলিম, অধ্যাপক ডা. শহিদুল্লাহ সিকদার, ন্যাপের ইসমাইল হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ওয়াজেদুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ জাসদ সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, ইসলামিক গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল বাহার মজুমদার টিপুসহ অজস্র রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা। এ ছাড়া শোক জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, কৃষক লীগ সভাপতি সমীর চন্দ চন্দ্র, সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি, যুব মহিলা লীগ সভাপতি নাজমা আকতার, সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, মহিলা লীগ সভাপতি সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম ক্রিক, ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ শান্তি পরিষদ সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টু এবং সাধারণ সম্পাদক মো. শাজাহান খান, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন-বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মহাসচিব ডা. ইশতেহামুল হক চৌধুরীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতৃবৃন্দ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর