বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

নিরাপত্তাহীন নৌপথের যাত্রীরা

একের পর এক খুন চুরি হচ্ছে প্রতিদিনই

রাহাত খান, বরিশাল

নিরাপত্তাহীন নৌপথের যাত্রীরা

ঢাকা-বরিশাল নৌপথের যাত্রীদের জানমাল নিরাপত্তাহীন। নির্বিঘ্নে হত্যাকান্ডের জন্য বিলাসবহুল নৌযানকে বেছে নিচ্ছেন অপরাধীরা। গত ৩ মাসে এ রুটের ২টি লঞ্চে এক নারীসহ ২ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এছাড়া যাত্রীদের লাগেজ নিয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়া, ফেলে দেওয়া এবং লঞ্চে চুরি, টানা পার্টি, মলম পার্টি ও ছিনতাইকারী প্রতিরোধেও বিলাসবহুল যাত্রীবাহী নৌযানগুলোতে নেই কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা। এ কারণে সাম্প্রতিক সময় বরিশাল ঢাকা নৌ রুটের যাত্রীবাহী জাহাজগুলো পরিণত হয়েছে অপরাধীদের অভয়ারণ্যে। যদিও যাত্রী সাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলোম সাদেক। গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে বরিশালগামী এমভি পারাবাত-১১ লঞ্চের বাণিজ্যিক কেবিন থেকে জান্নাতুল ফেরদৌস লাবনী (২৯) নামে এক যাত্রীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই যাত্রীকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বরিশাল নিয়ে আসছিল তার বন্ধু মনিরুজ্জামান। মধ্যরাতে লঞ্চের কেবিনে মতের অমিল হলে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সে। গত ১৪ নভেম্বর রাতে বরিশাল থেকে ঢাকাগামী একটি লঞ্চ থেকে কীর্তনখোলা নদীর চরমোনাই পয়েন্টে ঝাঁপিয়ে পড়েন ফাল্গুনী আক্তার নামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। ওই রাতেই নদীতে মাছ শিকাররত জেলেরা তাকে অর্ধমৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন।  সব শেষ গতকাল সকালে ঢাকা থেকে বরিশাল নদী বন্দরে আসা এমভি সুন্দরবন-১১ নামে একটি লঞ্চের ছাদের ইঞ্জিনের ধোয়ার চিমনীর আড়াল থেকে এক যুবকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঝালকাঠির নলছিটির শামীম হাওলাদার নামে ওই যুবকের সারা শরীরে ধারালো অস্ত্রের ৬টি কোপের চিহ্ন রয়েছে। এর আগেও একই রুটের এমভি পারাবত-১১ নামে একটি লঞ্চের স্টাফ কেবিন থেকে এক নারীর এবং এর আগে এমভি সুরভী-৮ নামে আরেকটি লঞ্চের আনসার কেবিন থেকে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া প্রায়ই বিভিন্ন লঞ্চের কেবিন থেকে যাত্রীদের মুঠোফোন ও স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান মালামাল চুরির অভিযোগ পাওয়া যায়।

এসব অপরাধ প্রতিরোধে লঞ্চগুলোর নিজস্ব কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। জানা গেছে, হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়া সুন্দরবন-১১ লঞ্চে কোনো আনসার নেই। ৩ জন নিরাপত্তাকর্মী পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করেন। ওই নিরাপত্তা কর্মীরা যাত্রীদের নিরাপত্তা নয়, মালিকের স্বার্থরক্ষায় টিকিটবিহীন যাত্রীদের প্রতিরোধ করে বলে জানান বরিশাল নৌ পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার আহসান হাবিব। সুন্দরবন-১১ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, তাদের লঞ্চে তো ৩ জন নিরাপত্তাকর্মী আছে।

অন্য অনেক লঞ্চে তো একজন নেই।

বরিশাল লঞ্চযাত্রী সংস্থার সদস্যসচিব অধ্যাপক মহসিন-উল ইসলাম হাবুল বলেন, লঞ্চ মালিকরা শুধু ব্যবসা নিয়ে ভাবেন। যাত্রীসেবা বা যাত্রীর সুবিধা-অসুবিধার দিকে মালিকদের নজর নেই। বরিশাল-ঢাকা রুটের লঞ্চগুলো দুর্বৃত্তদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের জান-মালের নিরাপত্তায় আনসার নিয়োগে তারা একমত। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ডিজি শিপিংয়ের।

 

সর্বশেষ খবর