বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

জনবল সরঞ্জাম সংকট চরমে

আজ ফায়ার সার্ভিস সপ্তাহ শুরু

আলী আজম

জনবল সরঞ্জাম সংকট চরমে

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরে জনবল ও আধুনিক সরঞ্জাম সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। ছোট আকারের আগুন দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাপণ সম্ভব হলেও সংস্থাটির দুর্বলতা ফুটে ওঠে বড় আগুনের ঘটনায়। সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতার দুর্বলতা আরও স্পষ্ট হয়েছে। বিশেষ করে ৫ নভেম্বর বিকালে রাজধানীর ডেমরার কোনাপাড়া মাদ্রাসা রোডে পাশা টাওয়ারের ১০ তলায় আগুন লাগলে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে। ১৬টি ইউনিটের ১০ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ততক্ষণে পুড়ে যায় ভবনের ৬টি তলা। যদিও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে সময় বিলম্ব হওয়ার পেছনে অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে আধুনিক সরঞ্জাম ও জনবল সংকটেই বিলম্ব হয় ফায়ার সার্ভিসের। শুধু একটি ঘটনা নয়, গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টা ও ২৮ মার্চ বনানীর এফ আর টাওয়ারের আগুন নেভাতে হিমশিম খেতে দেখা যায় ফায়ার সার্ভিসকে। অতিরিক্ত জনবল আনা হয় রাজধানীর বাইরে থেকেও। এদিকে, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সারা দেশেই বাড়ানো হচ্ছে ফায়ার স্টেশন। কিন্তু সে হারে বাড়েনি জনবল ও আধুনিক সরঞ্জাম। ১০ বছর আগে সারা দেশে ২০৪টি ফায়ার স্টেশন ছিল। বর্তমানে সে সংখ্যা ৪৩৬। অন্যদিকে এ অধিদফতরের প্রাধিকারপ্রাপ্ত জনবল রয়েছেন ১৩ হাজার ১১০ জন। অথচ কর্মরত রয়েছেন ১০ হাজার ৮৯৩ জন। যার মধ্যে ফায়ারম্যানের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। জানা গেছে, প্রথম শ্রেণির ফায়ার স্টেশনগুলোয় ৩৫ জন করে জনবল থাকার কথা। এর মধ্যে ফায়ারম্যান থাকবে ২২ জন। কিন্তু বাস্তবে ১৫-১৬ জনের বেশি ফায়ারম্যান নেই প্রথম শ্রেণির স্টেশনেও। একইভাবে দ্বিতীয় শ্রেণির ফায়ার স্টেশনগুলোয় জনবল থাকার কথা ২৭ জন করে। এর মধ্যে ফায়ারম্যান থাকার কথা ১৬ জন করে। কিন্তু এসব স্টেশনে ৮-১০ জনের বেশি ফায়ারম্যান নেই। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে। আগুনের ঘটনাও বেড়েছে। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের জনবল বাড়েনি। ফায়ার সার্ভিসের অন্তত ৩০ হাজার জনবল প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। এ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-বৈষম্য নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ল্যাডার (মই) রয়েছে ২০টি। ঢাকায় রয়েছে মাত্র ৯টি। এর মধ্যে সম্প্রতি সর্বোচ্চ ৬৪ মিটারের ২টি ল্যাডার কেনা হয়েছে। এ ছাড়া ৫৪ মিটার ও ২৭ মিটারের ল্যাডার রয়েছে। বিশেষায়িত গাড়িও বাড়ানো হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসে বিশেষায়িত গাড়ি এখন প্রায় ৬০০। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মনে করেন, ল্যাডারসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আরও প্রয়োজন।

 অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংকট নিরসনে সম্প্রতি জাম্বু কুশন, লাইট ডিউটি রেসকিউ বোট, ডাইভিং অ্যাপারেটাস, এয়ার কমপ্রেসর মেশিন, রিমোট কনট্রোল ফায়ার ফাইটিং ইউনিট, হেভি ডিউটি লাইট ইউনিট, টোয়িং ভেহিক্যাল, পোর্টেবল পাম্প, বিদ্রিং অ্যাপারেটাস, স্মোক ইজেক্টরসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি যুক্ত করা হয়েছে; যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মিডিয়া) মো. শাহজাহান শিকদার বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের সমস্যা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী বেশ কিছু প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর বেশির ভাগই চলমান অবস্থায় রয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশে ফায়ার স্টেশনের মোট সংখ্যা হবে ৭ শতাধিক। এ ছাড়া অধিদফতরের নতুন কাঠামোয় ২৫ হাজারের অধিক জনবল কাঠামো প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে অধিদফতরের তেমন কোনো সংকট থাকবে না। পাশাপাশি মুন্সীগঞ্জে ১০০ একর জমির ওপর ফায়ার একাডেমি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে; যা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।’

ফায়ার সপ্তাহ শুরু আজ : ‘প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা প্রস্তুতি; দুর্যোগ মোকাবিলায় আনবে গতি’ এ স্লোগান নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আজ সারা দেশে শুরু হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ-২০২০। ২১ নভেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী এ সপ্তাহ উদ্যাপন হবে। এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচি নিয়েছে দুর্যোগে প্রথম সাড়াদানকারী প্রতিষ্ঠান ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার সার্ভিস সদর দফতর সূত্র জানান, আজ সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর মিরপুরের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্স থেকে এর উদ্বোধন করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান বাণী দিয়েছেন।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, সপ্তাহ পালনের মূল লক্ষ্য জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রমে তাদের সম্পৃক্ত করা। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিন দিনব্যাপী সারা দেশে নানা ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। ২১ নভেম্বর ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরে রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে পদক বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সপ্তাহ কার্যক্রম শেষ হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর