শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বঙ্গমাতার দুটি ঘটনা ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে : আমু

নিজস্ব প্রতিবেদক

বঙ্গমাতার দুটি ঘটনা ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে : আমু

বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেছেন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছার দুটি ঘটনা স্বাধীনতার ইতিহাসে মাইল ফলক হয়ে থাকবে। একটি ঘটনা ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের আগের। আরেকটি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তি না নেওয়া। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় সংসদে বিশেষ অধিবেশনে অংশ নিয়ে সম্প্রতি তিনি এ কথা বলেন। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। বর্ষীয়ান রাজনীতিক আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের দুটি ঘটনা ইতিহাসের অনেক কিছুই নির্ভর করে। কারণ বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে বঙ্গমাতাই আমাদের স্বাধীনতার প্রেরণা জুগিয়েছেন, সাহস দিয়েছেন। সংগঠন পরিচালনার জন্য টাকা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় যখন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান বন্দী হলেন, তখন বঙ্গমাতা আমাদেরকে বলতেন, তোমরা কেউ ভেঙে পড় না। তোমাদের নেতার মনোবল ঠিক আছে। তিনি বীরের বেশেই ফিরবেন। দেশের ছাত্রসমাজ ও মানুষের আন্দোলনের মুখে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি দিতে চায়। বঙ্গবন্ধুর বাসায় বসে বৈঠক করে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটি প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি মেনে নিয়েছিল। কিন্তু একমাত্র বেগম মুজিব সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। তিনি বিরোধিতা করে বলেছিলেন, এটা হতে পারে না। মুক্ত মানুষ হিসেবে ৩৫ জন সহকর্মীকে নিয়ে মাথা উঁচু করে বের হতে হবে বঙ্গবন্ধু। আমির হোসেন আমু বলেন, জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে অনেক কথা হয়। সেদিন অনেকেই অনেক কথা বলেছিলেন। অনেকেই অনেক কথা লিখে দিয়েছিলেন। কিন্তু যখন ভাষণ দিতে বের হবেন, তখন উনি (বঙ্গমাতা) বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, ‘কারও কথায় কান দিবা না।

তুমি এতদিন মানুষের জন্য কাজ করেছ, যে বিশ্বাস নিয়ে রাজনীতি করছ, যা মনে আসে তাই বলবা।’ এই দুই সিদ্ধান্ত স্বাধীনতার ইতিহাসের মাইল ফলক হয়ে থাকবে।

সাবেক শিল্পমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শত ত্যাগ স্বীকার করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তার স্বপ্নের বাংলা দিয়ে যেতে পারেননি, কিন্তু কাঠামো তৈরি করেছিলেন। আজকে তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন বলেই আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা বঙ্গবন্ধুর অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করছি। পৃথিবীর হাতে কয়েকজন রাষ্ট্র নায়কের মধ্যে অন্যতম তিনি (শেখ হাসিনা)।

বক্তব্যের শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্য, ১৫ আগস্ট নিহত সব শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি। আমু বলেন, ১৯৪৯ সালে একটি দল গঠনের চিন্তাভাবনা করা হয়। এরপর ২৩ জুন রোজ গার্ডেনে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করা হয়। প্রতিষ্ঠাকালে জেলখানা থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। তিনি বলেন, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক পাকিস্তান হওয়ার পর কোনো রাজনীতি করতেন না। তিনি সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। ১৯৫২ সালে নির্বাচনের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তখন ধারণা করা হচ্ছিল, দেশে একটি নির্বাচন হবে। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক পদত্যাগ করে মুসলিম লীগে যোগদান করলেন। নির্বাচনে শেরেবাংলা পরাজিত হলেন। একদিন বঙ্গবন্ধু দেখা করে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার কথা বলেন। এরপর চাঁদপুরে এক জনসভায় শেরেবাংলা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে গেলেন। সেদিন শেরেবাংলা বলেছিলেন, ‘যারা চুরি করবেন, তারা মুসলিম লীগ করুন, যারা ভালো করবেন তারা আওয়ামী লীগে যোগদান করেন’। ‘আমি বুড়ো মানুষ মুজিবুর যা বলে তা শোনেন’। তিনি (শেরেবাংলা) অনেকের সঙ্গে আলাপ করলেন, আওয়ামী লীগে যোগদান করবেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের হাসেম খান, সালাম উদ্দিন, খন্দকার মোশতাক নানা পরামর্শ দেওয়া শুরু করলেন। তারা বললেন, আপনি কেন আওয়ামী লীগের ওপর ভর করে নেতা হবেন। আপনার অনেক শক্তি, অনেক লোক। এর আগে বঙ্গবন্ধুসহ অন্যরা শেরেবাংলাকে সংসদ নেতা ও পার্টির নেতা হতে বলেছিলেন।

আমির হোসেন আমু বলেন, আমাদের মধ্যে ভাঙন ধরাতে পাকিস্তানিরা আমাদের লোক দিয়ে খেলেছেন। এ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু আন্দোলন সংগ্রাম করেছিলেন। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেন। তখন একটা কথা উঠল, যারা দলে আছেন তারা মন্ত্রিসভায় থাকতে পারবেন না। একমাত্র বঙ্গবন্ধু ছাড়া কেউ মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেননি। তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক পদে ফিরে গেলেন। সেই ফিরে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে দলকে সংগঠিত করেছিলেন। যদিও আওয়ামী লীগ মাত্র ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত ১৯৪৭-১৯৫৬ সাল পর্যন্ত বাঙালি কোনো শিল্পপতি ছিলেন না। তখন বঙ্গবন্ধু ইস্ট পাকিস্তানে কলকারখানা স্থাপন করেন। যেটা এখন বিসিক নামে পরিচিত। এরপর কক্সবাজারকে পর্যটন এলাকা ঘোষণা করলেন। ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানা, সাভার কারখানা, লেবার আইন পাস, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি স্থাপন করলেন বঙ্গবন্ধু। এই দেশে আমদানি-রপ্তানি কারক শিল্প ছিল না। ওয়াপদা, রমনা স্থাপন, ইরি ধান সেদিন আওয়ামী লীগ সরকার চালু করে। এই দেশের প্রথম চীনের সঙ্গে সম্পর্ক হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর