শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

চলছে কৌশলে পদ্মা দখল

শতাধিক স্থানে দখল নিতে চলছে ভরাটের কাজ হারিয়ে যাচ্ছে নদীর নাব্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

চলছে কৌশলে পদ্মা দখল

রাজশাহীতে পদ্মা নদীতে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। ছবিটি গতকাল আলুপট্টি নদীর কাছ থেকে তোলা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজশাহীতে কৌশলে দখল হচ্ছে পদ্মা নদী। দূষণের পর এবার শুরু হয়েছে পদ্মা দখল। শহররক্ষা বাঁধ দখল করে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের স্থাপনা। পদ্মার শতাধিক স্থানে দখল নিতে চলছে ভরাটের কাজ। দখলের ফলে নদীর নাব্য হারিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন গবেষকরা। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বুলনপুর থেকে শ্যামপুর পর্যন্ত শহররক্ষা বাঁধ দখল করে নানা স্থায়ী স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। এ ছাড়া শহররক্ষা বাঁধেও ভ্রাম্যমাণ অস্থায়ী স্থাপনা বসানো হয়েছে। আবর্জনা ফেলে নদীতীর দখল করা হচ্ছে। তীরসংলগ্ন বাসিন্দারা বাসাবাড়ির আবর্জনা ফেলেও নদী দখল করছেন। দেখা গেছে, নগরীর শ্রীরামপুরে শহররক্ষা বাঁধ ঘেঁষে পদ্মার বিশাল জমি দখল করে গড়ে উঠেছে দুটি বড় স্থাপনা। সেখানে রেস্টুরেন্টের ব্যবসা করা হয়। একটি স্থায়ী কনফারেন্স সেন্টারও গড়ে তোলা হয়েছে। পাঠানপাড়ায় শহররক্ষা বাঁধ ঘেঁষে পদ্মার পাড়ে সিটি করপোরেশন গড়ে তুলেছে লালন শাহ পার্ক। তার একাংশ পাঠানপাড়া ও দরগাপাড়ার লোকজন অস্থায়ী গোয়ালে পরিণত করেছে। তারা সেখানে গরু লালনপালন করে। এ ছাড়া বড়কুঠিসংলগ্ন পদ্মার তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ২০-২৫টি অস্থায়ী দোকান। শহররক্ষা বাঁধের ওপর আছে অস্থায়ী দোকান ও রাজনৈতিক দলের কয়েকটি ওয়ার্ড কার্যালয়। কুমারপাড়া পদ্মার পাড়ে প্রতিদিন সিটি করপোরেশনের ভ্যান থেকে ময়লা-আবর্জনা ফেলে পাড় দখল করা হচ্ছে। অনেকে তাদের বাসাবাড়ির নিচে পদ্মার পাড় দখল করে নিচ্ছেন। এসব দেখার যেন কেউ নেই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু বলেন, ‘নদীতে সলিড কিংবা লিকুইড কোনো বর্জ্য ফেলা উচিত নয়। এটা আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ লিকুইড বর্জ্য পানিতে মিশে বায়োলজিক্যাল অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি করে। এর ফলে জলজ প্রাণী মারা            যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘সলিড বর্জ্য ফেললে কিংবা নদীর পাড় বা তীরবর্তী এলাকায় বসতি গড়লে তা নদীর পাড় দুর্বল করে দেয়। শহররক্ষা বাঁধের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। রাজশাহীতে এমনিতে বাঁধের পাশে নদীসংলগ্ন এলাকায় বসতি আছে যা শহররক্ষা বাঁধের জন্য মারাত্মক হুমকি। এসব অবশ্যই সরিয়ে ফেলা উচিত।’ রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, ব্রিটিশ আমলে যখন শহররক্ষা বাঁধ তৈরি হয় তখন জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি। এ জন্য বাঁধের পাশের জমি খাসজমি হিসেবে পরিগণিত হয়। খাসজমির মালিক জেলা প্রশাসন। অনেকে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ইজারা নিয়েই স্থাপনা তৈরি করছেন। রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নজরুল ইসলাম জানান, শহররক্ষা বাঁধের কোনো জমি কেউ ইজারা নেয়নি।

খাস খতিয়ান জমি হলেও কেউ কোনো অনুমতি বা ইজারা নেয়নি। তবে শ্রীরামপুর টি-বাঁধ থেকে সিমলা পার্ক পর্যন্ত শহররক্ষা বাঁধের জায়গা নিয়ে হাই কোর্টে মামলা চলছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর