শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

জামানত প্রথা বাতিল চান ইপিএস কর্মীরা

দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মরত

ওমর ফারুক হিমেল, দক্ষিণ কোরিয়া

বেশ কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমবাজারে দেশভিত্তিক কোটা পূরণ করতে পারছে না বাংলাদেশ। ২০১০ সালে নেপাল এবং ইন্দোনেশিয়ার কর্মী বাংলাদেশি ইপিএস কর্মীর তুলনায় কম ছিল। অথচ বর্তমানে নেপালের ৬০ হাজার, ইন্দোনেশিয়ার প্রায় ৪০ হাজার ইপিএস কর্মী রয়েছেন। অন্যদিকে, কোরিয়ায় বাংলাদেশি ইপিএস কর্মীর সংখ্যা ১৩ হাজার থেকে ৯ হাজারে নেমে এসেছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় ইপিএস কর্মী হিসেবে যারা কাজ করছেন তারা এমনিতেই নানা সমস্যায় রয়েছেন। তার ওপর এখন ‘জামানত’ ইস্যুটি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রবাসীদের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার ধরে রাখতে হলে অবিলম্বে জামানত ইস্যু বিলুপ্ত করতে হবে বলে প্রবাসীরা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) দক্ষিণ কোরিয়াগামী বাংলাদেশি ইপিএস কর্মী থেকে প্রাপ্ত জামানতবিষয়ক নির্দেশিকা ২০২০ জারি করে। তাতে দেখা যায়, দক্ষিণ কোরিয়াগামী বাংলাদেশি ইপিএস সাধারণ কর্মীদের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা এবং দক্ষিণ কোরিয়াগামী বাংলাদেশি রি-এন্ট্রি কর্মীদের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা জামানত হিসেবে পে-অর্ডার বোয়েসেল বরাবর দিতে হবে।

 ইপিএস কর্মী আবদুস সামাদ জানান, কোরিয়াতে যারা বসবাস করছেন তারা নানান সমস্যার কারণে কোম্পানি পরিবর্তন করেন। কোরিয়ার ইপিএস কর্মীরা আশা করছেন, জামানতের বিষয়টি কোরিয়া বাংলাদেশ দূতাবাস সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুরাহা করবেন। দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম বলেন, বিভিন্ন সময় সামাজিক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে আমরা ইপিএস কর্মীদের কথা মাথায় রেখে বোয়েসেলে প্রস্তাবনা পাঠাই। যৌক্তিক দাবিগুলো ইপিএস কর্মীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা করা হবে।

বিএসকে সেক্রেটারি সালাউদ্দীন তারেক বলেন, কোম্পানি পরিবর্তনে কোরিয়ান সরকার, এইচআরডি অথবা শ্রম মন্ত্রণালয়ের কোনো বিধিনিষেধ নেই, কিন্তু বোয়েসেলের সিদ্ধান্ত ইপিএস কর্মীদের ভাবিয়ে তুলেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশসহ মোট ১৬টি দেশ থেকে কর্মী নেয় দক্ষিণ কোরিয়া।

অনলাইন ডাটাবেজ এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম (ইপিএস) স্কিমের আওতায় কোরিয়ান মালিকপক্ষ বাংলাদেশ থেকে বা অন্য যে কোনো দেশ থেকে কর্মী নিতে পারে। আর এর পুরো নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে। বাংলাদেশিদের মধ্যে ১৩ হাজার ইপিএস কর্মী স্কিমের মাধ্যমে আসা। করোনার এই সময় রি-এন্ট্রি কমিটেড বন্ধ রেখেছে দেশটি। তাছাড়া ছুটিতে এবং রিলিজে থাকা অনেকেই দেশে আটকা পড়েছেন। সাম্প্রতিককালে আটকে পড়াদের ফেরাতে দক্ষিণ কোরিয়া সরকারকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে গত ৬ অক্টোবর দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে কথা হয়েছে। আটকে পড়া কর্মীদের ফেরাতে অনুরোধ জানিয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদও কোরিয়ার সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু এখন সবকিছুকে ছাপিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছে জামানত ইস্যুর বিষয়টি। অধিকাংশ ইপিএস কর্মী জামানতের বিলুপ্তি চান। দক্ষিণ কোরিয়ার বাংলাদেশি শ্রমবাজারে যেখানে ইপিএস কর্মী বাড়ানো দরকার, সেখানে জামানতের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের বাজার হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সর্বশেষ খবর