বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পোশাক রপ্তানির কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ

নিরাপত্তা চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিজিএমইএর চিঠি

রুহুল আমিন রাসেল

তৈরি পোশাক রপ্তানির কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। কোনো প্রকার ব্যাংক ডকুমেন্ট ছাড়াই বিদেশি ক্রেতার সঙ্গে মিলেমিশে এই অর্থ আত্মসাৎ করেছে জালিয়াত চক্র। দেশীয় এই চক্র একে একে ৩০ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের টাকা আত্মসাৎ করেছে। চক্রটি এখন ভয়ভীতিও প্রদর্শন করছে। এমন পরিস্থিতিতে পোশাকশিল্প মালিকরা জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সিনিয়র সহসভাপতি মো. ফয়সাল সামাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ক্রেতারা বেআইনিভাবে কাগজপত্র জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাৎ করছেন। ওই জালিয়াত চক্রের দেশীয় সহযোগী পোশাকশিল্প মালিকদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে মালিকদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়েছি। গত ১ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেওয়া ওই চিঠিতে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেছেন, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার কোয়ান্টাম লজিস্টিক লিমিটেড মাদার ক্যারিয়ার প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল লাইন এবং ওয়ান হাই শিপিং লাইনের সহযোগিতায় ৩০টি রপ্তানিকারক শিল্প প্রতিষ্ঠানের ৪৩       কোটি ১৬ লাখ ৯৮ হাজার ১২২ টাকা বা ৫১ লাখ ৫০ হাজার ৯১৪ দশমিক ২৪ মার্কিন ডলার মূল্যের রপ্তানি পণ্য আত্মসাৎ করা হয়েছে। ক্রেতা মনোনীত ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার কোয়ান্টাম লজিস্টিক লিমিটেড ৩০টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি হওয়া পণ্য চূড়ান্ত গন্তব্য আমেরিকায় পৌঁছানোর পর প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল লাইন এবং ওয়ান হাই শিপিং লাইনের সহযোগিতায় কোয়ান্টাম লজিস্টিক লিমিটেড নিজস্ব প্যাডে অনুরোধপত্র দিয়ে কোনো প্রকার ব্যাংক ডকুমেন্ট ছাড়া রপ্তানি বিলের পেমেন্ট নিশ্চিত না করে সমুদয় পণ্য বিদেশি ক্রেতার সঙ্গে মিলে রপ্তানি মূল্যের অর্থ আত্মসাৎ করে পরস্পর লাভবান হয়।

ওই চিঠিতে বিজিএমইএ বলেছে, বর্তমানে অভিযুক্ত নাজমুল হুদা গং রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ফিম্যাক্স সোয়েটার কম্পোজিট লিমিটেডের মামলার বিপরীতে নরসিংদী কারাগারে বন্দী আছে। পরবর্তীতে আরও দুটি প্রতিষ্ঠানে মামলার বিপরীতে অভিযুক্তদের গ্রেফতার দেখানো আছে। অভিযুক্তরা জামিনে বেরিয়া এসে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এ ছাড়া রপ্তানিকারকদের বিভিন্ন উপায়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে যাচ্ছে। আসামিরা জামিনে বেরিয়ে এলে সব রপ্তানিকারক রপ্তানি বিল থেকে বঞ্চিত হওয়া ছাড়াও জীবনের নিরাপত্তাহীনতার সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লিখিত তথ্যের আলোকে সব রপ্তানিকারকের রপ্তানি বিল প্রত্যাবাসন এবং তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে অভিযুক্ত নাজমুল হুদা তুহিন গংকে আইনের আওতায় বন্দী রাখা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যদের আইনের আওতায় আনয়নের জন্য বিশেষ অনুরোধ করেছে বিজিএমইএ।

এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী জেএফকে ফ্যাশন লিমিটেড ও রশিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কফিল উদ্দিন গতকাল বলেন, ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামের আসামি নাজমুল হুদা রপ্তানির টাকা আত্মসাৎ করে আমাদের পথে বসিয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লসঅ্যাঞ্জেলেসে ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যে বাড়ি কিনেছে এই জালিয়াত চক্রের প্রধান হোতা নাজমুল হুদা। এখন আমাদের বিভিন্ন মাধ্যমে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।

বিজিএমইএ ওই পত্রে সংযুক্তি হিসেবে মামলার বিবরণ ও ক্ষতিগ্রস্ত কতিপয় প্রতিষ্ঠানের তালিকা দিয়ে তার অনুলিপি দেওয়া হয়েছে অর্থ, বাণিজ্য, আইনমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে। এতে বলা হয়, সিভিক অ্যাপারেলস লিমিটেডের ৮,০৪,৮৫৬.১৩ মার্কিন ডলার, টিভলি অ্যাপারেলস লিমিটেডের ৬৩,৪৭৬.২০ ডলার, জেএফকে ফ্যাশন লিমিটেডের ১,৬০,৫০০ ডলার, আর আর এ?িলিক লিমিটেডের ৩৮,৮৪১ ডলার, সিনহা নিট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৪,০৫,০২৬.৯৮ ডলার, এস এফ সোয়েটার্স লিমিটেডের ৯৮,০০৭ ডলার, নিট জোন মোড (প্রাইভেট) লিমিটেডের ২৮২,৯৭৬ ডলার, মলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩৩,০০০ ডলার, ইউনিটি সোয়েটার লিমিটেডের ১৪৫,০৯৮ ডলার, রংপুর টেক্সটাইল লিমিটেডের ৮,০০,০০০ ডলার, ডিসনি সোয়েটার লিমিটেডের ২,৪৫,২৫৭ ডলার, সেভেন স্টার সোয়েটার লিমিটেডের ৮৮,৫৭৮ ডলার, সাউথ ইস্ট সোয়েটার লিমিটেডের ১৭৭,৮৭২ ডলার, কাকাডো সোয়েটার লিমিটেডের ১২৭,৭০৭.৬০ ডলার, এম অ্যান্ড এস সোয়েটার লিমিটেডের ১০০,৬৪৩ ডলার, কৃষান নিটিং লিমিটেডের ৬৫,০৫৮ ডলার, জাস ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেডের ৭০,৭১৩.৬০ ডলার, গ্রিন স্টোন নিটওয়্যার লিমিটেডের ৭৬,৩১৩.২৮ ডলার, কাশমিলন সোয়েটার লিমিটেডের ৫২,৪০০ ডলার, জেড এ সোয়েটার লিমিটেডের ৭৭,২৫০ ডলার, তুলাগা সোয়েটার ফ্যাশন লিমিটেডের ৭১,১০০ ডলার, চট্টগ্রামের বিএলপি ওয়ান সোয়েটার লিমিটেডের ৪৪৬,৯০০ ডলার, রানেসকো সোয়েটার লিমিটেডের ৩৭,৯০০ ডলার, ফেম্যাক্স সোয়েটার কম্পোজিট লিমিটেডের ৪৩৬,৩৬৫.২০ ডলার, আর এস সোয়েটার লিমিটেডের ৪৯,৪১০ ডলার এবং আরমিন সোয়েটার্স (বিডি) লিমিটেডের ৩,৮৮,৬২২.৬০ মার্কিন ডলার আত্মসাৎ করা হয়েছে।

 

 

সর্বশেষ খবর