বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
বসবে শেষ স্প্যান

পদ্মায় মিলবে আজ মুন্সীগঞ্জ শরীয়তপুর

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

পদ্মায় মিলবে আজ মুন্সীগঞ্জ শরীয়তপুর

স্বপ্নের দ্বারপ্রান্তে পদ্মা সেতু। আজই বসতে পারে শেষ স্প্যান। মিলিত হবে মুন্সীগঞ্জ শরীয়তপুর -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বহুল আকাক্সিক্ষত পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসছে আজ। সর্বশেষ ৪১তম স্প্যানটি গতকাল বিকালে ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের কাছে নেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আজই তা বসানো হবে পিলারে। এটি বসানোর মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর পুরোটাই দৃশ্যমান হবে। প্রমত্তা পদ্মা নদীতে মিলবে আজ মুন্সীগঞ্জের মাওয়া আর শরীয়তপুরের জাজিরা। পদ্মার দুই পাড়ের মানুষ তাই আনন্দে উদ্বেলিত। পদ্মা সেতুর কর্মযজ্ঞ শেষ হলে আড়াই ঘণ্টার বিরক্তির ফেরিযাত্রার স্মৃতি হারিয়ে যাবে ৬-৭ মিনিটের দ্বিতল সড়কে।

খুলে যাবে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে খরস্রোতা পদ্মায় সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বিশ্ব ইতিহাসে অনন্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখবে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা ও দৃঢ়চেতা মনোবল আর সাহসী নেতৃত্বে সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে শেষ প্রান্তে আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সেতুর উভয় পাড়ে সংযোগ সড়ক ও টোল প্লাজার কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। শেষদিকে নদী শাসনের কাজ। ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করেন। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর প্রথম স্প্যান (স্প্যান-৭-এ) বসানোর মধ্য দিয়ে নির্মাণ যাত্রা শুরু হয় স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। বিজয়ের এ মাসেই বিজয় দিবসের আগেই শেষ স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে পুরো সেতুর অবকাঠামো দৃশ্যমান হবে। এ উপলক্ষে এখন পদ্মাপাড়ে সাজ সাজ রব। ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছেন তাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে এক নজর দেখতে। শুক্র ও শনিবারে হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভিড় জমে পদ্মা সেতুকে দেখার। এ সেতুতে কাজ করছেন দেশি-বিদেশি কয়েক হাজার কর্মী।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে মুঠোফোনে বলেন, পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে শেখ হাসিনাই মূল শক্তি। শেখ হাসিনার হাত দিয়েই পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়েছে এবং শেষ হবে। এই সেতু প্রধানমন্ত্রীর সাহসের ফসল। এটা তাঁর একক কৃতিত্ব। তাঁর একক সিদ্ধান্তের কারণে নিজস্ব অর্থায়নে এতবড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে। পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে অনিশ্চিত নদীর নাম হলো পদ্মা। এই পদ্মা নদীতে এতবড় সেতু নির্মাণ সত্যিই একটি দৃষ্টান্ত বটে। প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই ভাগ্যবতী। তাঁর আশা মহান আল্লাহ পূরণ করছেন। এ সময় স্মৃতিচারণ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রথম স্প্যানটি বসেছিল হেমন্তের কুয়াশা ভেজা কোনো এক সকালে। সেদিন প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার কাজে দেশের বাইরে ছিলেন। তাই আমি তাকে ফোনে বলেছিলাম ইতিহাসের এই শুভ মাহেন্দ্রক্ষণে উপস্থিত থাকার জন্য কয়েক দিন দেরি করতে চাই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সেদিন টেলিফোনে বলেছিলেন পদ্মা সেতুর কাজ এক মিনিটের জন্যও বসিয়ে রাখা যাবে না। তাই বর্ষার ভরা মৌসুমেও পদ্মা সেতুর কাজ শিডিউল মাফিক দ্রুত গতিতে চলে। তিনি আরও জানান, বিশ্বের অন্যতম এই সেতুটি চালু করার লক্ষ্যে এক দল চাইনিজ ও বাংলাদেশি প্রকৌশলী, পদ্মা সেতুর টেকনিক্যাল পরামর্শক, বিশেষজ্ঞ প্যানেল অব এক্সপার্ট, দক্ষ দেশি-বিদেশি প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক, পদ্মা সেতু প্রতিষ্ঠার নানা সরঞ্জামাদি নিয়ে শিডিউল মাফিক কাজ করছে।

সেতুমন্ত্রীর ১৭৪ বার প্রকল্প পরিদর্শন : সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ পর্যন্ত ১৭৪ বার পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন। সুযোগ পেলেই পদ্মাপাড়ে ছুটে আসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। নিয়মিত খোঁজখবর নিয়ে তদারকি করেন। প্রকল্প এলাকার প্রায় প্রতিটি কর্মকান্ড স্বচক্ষে পরিদর্শন করেন এবং প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিকদের সঙ্গে কুশল বিনিময়সহ তাদের সুবিধা-অসুবিধার খোঁজ নেন।

সর্বশেষ খবর