দলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসন সাজাপ্রাপ্ত এবং অসুস্থ। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রায় এক যুগ দেশের বাইরে। এই দুঃসময়ে দায়িত্বশীল নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন, এমনটা প্রত্যাশা করেন দলটির সমর্থক-কর্মীরা। কিন্তু সিলেটে দলটির নেতারা নিজেদের মধ্যে হানাহানিতে ব্যস্ত। আধিপত্যকে কেন্দ্র করে জেলা বিএনপিতে এখন গৃহদাহ দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে সিলেট জেলা বিএনপি। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে গত বছর ২ অক্টোবর ২৫ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। কিন্তু সম্মেলন দূরে থাক, কোনো উপজেলায় কমিটি করতে পারেনি। আহ্বায়ক কমিটিতেও দেখা দেয় মতবিরোধ। আহ্বায়ক কমিটির ১৬ জন একদিকে, বাকি নয়জন আরেক দিকে ‘জোট’ বাঁধেন। অনেক দেনদরবারের পর ১৩ উপজেলা ও পাঁচটি পৌরসভার প্রত্যেকটিতে ২১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়। কিন্তু এসব কমিটি নিয়েও জেলা আহ্বায়ক কমিটিতে বিরোধ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। নয়জনের জোট থেকে দাবি করা হয়, উপজেলা ও পৌর কমিটিগুলোতে তাদের পক্ষের কাউকে দায়িত্বে রাখা হয়নি। এ নিয়ে কেন্দ্রের কাছে এবং সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হাসান জীবন ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলনের কাছে অভিযোগও পাঠান। পরে কেন্দ্রের নির্দেশে কমিটিগুলোর প্রত্যেকটিতে ছয়জন করে সদস্য বাড়ানো হয়। সে অনুযায়ীই উভয় পক্ষের লোক দিয়ে কমিটির আকার বাড়ানো হয়। এরপর জেলার আহ্বায়ক কমিটির বিরোধ সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ ছিল। কিন্তু জানুয়ারিতে সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি ঘিরে ফের গৃহদাহ দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৯ নেতা মনে করছেন, আহ্বায়ক কমিটির বাকি ১৬ নেতার মধ্য থেকেই জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন। তাই তারা এখন প্রকাশ্যে বিরোধিতায় নেমেছেন। সোমবার তারা সংবাদ সম্মেলন করে জেলার আহ্বায়ককে ‘অযোগ্য ও অদক্ষ’ বলে মন্তব্য করেন। আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আশিক উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কামরুল হুদা জায়গীরদার আহ্বায়ক হওয়ার পর থেকে সাবেক সভাপতি আবুল কাহের শামীম ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদের নির্দেশনায় চলছেন। ‘আবুল কাহের শামীম গংরা আবারও নেতৃত্বে আসার তৎপরতায় জেলা আহ্বায়ককে পকেটস্থ করে কার্যক্রম চালাচ্ছেন, যা দলকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’ তবে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির বাকি পক্ষ ওই ৯ নেতাকে ‘বিপৎগামী’ বলে অভিহিত করছে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার বলেন, যারা বিরোধিতা করছেন, তারা দলের ভালো চান না। তারা চান, সম্মেলন নয়, কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেওয়া একটা কমিটি হবে।