মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

হালদা দূষণের উৎস নিয়ে রহস্য

দুই সপ্তাহ ধরে ভাসছে কালো পানি

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে কালো রঙের দূষিত পানির উৎসের সন্ধান পাওয়া যায়নি। দুই সপ্তাহ পার হওয়ার পরও কালো পানির উৎসের সন্ধান না পাওয়ায় ক্রমান্বয়ে দূষণ বাড়ছে। ভাসছে কালো পানি। ফলে মা মাছ ও জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত ১ ডিসেম্বর থেকে হালদা নদীর রামদাশ মুন্সিরহাট এলাকা, কাগতিয়া, গড়দুয়ারা, নাজিরহাট পৌর এলাকা ও রাউজানের বিভিন্ন পয়েন্টের পানির রং হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে যায়। হালদার পানির স্বাভাবিক রং পরিবর্তন হওয়ায় বিভিন্ন এলাকার উৎসুক জনতার ভিড় জমে। হালদায় জোয়ার শুরু হলে গাঢ় বিশ্রী রং মিশ্রিত পানির প্রবাহ দেখা যায়। দুই দিন পর পরিবেশ অধিদফতর চার স্থান থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পরীক্ষা করে। কিন্তু ওই পরীক্ষায় তারা পানির দূষণের নির্দিষ্ট উৎস খুঁজে পায়নি। এমন অবস্থায় আজ মঙ্গলবার আবারও নমুনা সংগ্রহ করা হবে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনও কালো পানির উৎস খুঁজছে বলে জানা যায়। চবি হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘নগরে বর্তমানে মেগা প্রকল্পের অধীনে খাল-নালায় বাঁধ দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। পরে বদ্ধ থাকা পানিগুলো ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের সম্ভাব্য ধারণা, ছেড়ে দেওয়া পানিগুলো অক্সিজেন এলাকার বিভিন্ন খাল হয়ে হালদা নদীতে পড়ছে। জোয়ারের সময় পানিগুলো সাধারণ পানির সঙ্গে মিশে দূষণ করছে। মঙ্গলবার আবারও পানির নমুনা সংগ্রহ করা হবে। তখন বোঝা যাবে দূষিত পানির উৎস কোথায়। এভাবে হালদা নদীর পানির রং পরিবর্তন হলে মা মাছ ও জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়বে।’ হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, ‘দূষিত পানির উৎসের সন্ধানে জোয়ার-ভাটা হিসাব করে একাধিকবার বের হয়েছি। ছোট খালের মুখসহ বিভিন্ন অংশে পরিদর্শন করেছি। তবে কোথাও এর উৎসের সন্ধান মেলেনি। উৎসের সন্ধান মিললে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ জানা যায়, গত দুই বছর ধরে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন হালদা নদীর দূষণ রোধ ও মা মাছ রক্ষায় নিয়মিত অভিযান চালিয়ে আসছে। অভিযান পরিচালনায় নামানো হয়েছে তিনটি নৌকা। বন্ধ করা হয়েছে হালদা দূষণের অন্যতম কারণ হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট ও এশিয়া পেপার মিল। গত দুই বছরে পরিচালিত ১৩৯টি অভিযানে ধ্বংস করা হয় বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত ৯টি ড্রেজার ও ২৭টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা, জব্দ করা হয় ১ লাখ ১৫ হাজার ঘনফুট বালু ও ২ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০ মিটার জাল, কারাদন্ড দেওয়া হয় তিনজন, বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত পাইপ ধ্বংস করা হয় ৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার, নিলামে বিক্রি করা হয় ২ লাখ ২৫ হাজার টাকার বালু ও জরিমানা করা হয় ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। এত অভিযানের পরও থামছে না হালদায় জাল বসানো, বালু উত্তোলন ও দূষণ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর