সোমবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

নারী কারুশিল্পীর গ্রাম নাচোলের টিকইল

মো. রফিকুল আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

নারী কারুশিল্পীর গ্রাম নাচোলের টিকইল

নারী কারুশিল্পীর গ্রাম টিকইল। এই গ্রামের প্রায় সব নারীই যেন একেকজন কারুশিল্পী। বাড়ির মাটির তৈরি ঘরের দেয়ালে দেয়ালে বর্ণিল আলপনা। এঁকেছেন এই গ্রামেরই নারী-গৃহবধূরা। তাই ‘টিকইল’ এখন আলপনা গ্রাম। ইলামিত্রের নাচোলে আলপনা গ্রামের খ্যাতি এখন বিশ্বজুড়ে। এই গ্রামের দৃষ্টিনন্দন বাড়ি দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই ভিড় করেন মানুষজন। রয়েছে পরিদর্শন বই। গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগ করে ওই বইয়ে মন্তব্য লেখেন দর্শনার্থীরা।

দেশের উত্তরের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ। বরেন্দ্র অঞ্চল ও কিংবদন্তি ইলামিত্র খ্যাত উপজেলা হলো নাচোল। এই উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম টিকইল। এখানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসবাস বেশি। এই ‘টিকইল’ দেশ-বিদেশে আলপনা গ্রাম নামে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। অনন্তকাল ধরে বংশপরম্পরায় বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে আলপনা এঁকে আসছেন এই গ্রামে নারীরা। প্রচার-প্রচারণার অভাবে কারও নজর কাড়েনি। বর্তমানে পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদৌলতে এই গ্রামটি প্রচার পায়। পরিচিতি লাভ করে আলপনা গ্রাম নামে। বাড়ির দেয়ালগুলো যেন একেকটি ক্যানভাস। রান্নাঘর থেকে শোবার ঘর, তুলসীতলাসহ প্রতিটি দেয়ালই নারীরা ভরে ফেলেছেন হাতে আঁকা আলপনায়। সনাতন ধর্মের নারীরা দেয়ালে দেয়ালে আলপনা এঁকে দেবতার সুদৃষ্টি ও আশীর্বাদও কামনা করেন।

বেশি আলপনা আঁকা হয় পূজা-পার্বণে। দেয়ালে দেয়ালে কারুকাজ দেখে ২০১৯ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক গ্রামটির নাম আলপনা গ্রাম নামে ঘোষণা করেন। অবহেলিত এই গ্রামে ২৯টি সোলার প্যানেলের মাধ্যমে আলোকিত করেন। স্থানীয়দের মতে, ছেলের জন্য পাত্রী দেখার সময় পাত্রীর বাড়িতে আলপনার সৌন্দর্যও দেখতেন মুরব্বিরা। তারপর থেকেই ঘরের দেয়ালে আলপনা অঙ্কনের প্রচলন শুরু। লাল, নীল, সাদাসহ হরেক রকমের প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করা হয়। আলপনা গ্রামের মীল কারিগর বেখন বর্মন (৫০) জানান, আলপনা স্থায়ী করতে রংও তৈরি করেন অনেক গৃহিণী।

ওই গ্রামের খুদে আলপনাশিল্পী স্কুলছাত্রী রিমা জানান, মা এবং দাদির আঁকা দেখে দেখে আলপনা আঁকতে শিখেছেন তিনি। তার বয়সি গ্রামের অনেক মেয়েকে আলপনা আঁকার তালিমও দেন তিনি।

লোকজ গবেষক ড. মাজহারুল ইসলাম তরু আলপনা গ্রাম সম্পর্কে বলেন, এই গ্রামের মানুষ সব সময় পরিপাটি আলপনা এঁকে বাড়িঘরের সৌন্দর্য বর্ধন করে থাকেন। এই গ্রামে কোনো শিশুর জন্ম হলে সেও রুচিশীলতার মধ্যে বড় হতে থাকে। এই গ্রামের বাসিন্দা দাসু বর্মণের বাড়িতে দর্শনার্থীদের জন্য একটি পরিদর্শন খাতা রাখা হয়েছে। যেখানে আলপনা গ্রামের সৌন্দর্য দেখে দর্শনার্থীরা পরিদর্শন খাতায় তাদের মন্তব্য লিখে রেখে যান। দর্শনীয় স্থান না হলেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ দেখতে আসেন সুন্দর সাজানো-গোছানো আলপনায় আঁকা গ্রামটি।

সর্বশেষ খবর