বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্র্যাকের কারণে সর্বোচ্চ সুফল না পেলেও যাত্রীসেবায় রেলে সংযোজিত হয়েছে ১১০ কিমি গতিবেগের ইঞ্জিন। প্রায় এক দশক পর বাংলাদেশ রেলওয়েতে নতুন এই ইঞ্জিন পর্যায়ক্রমে যুক্ত হচ্ছে। রেলওয়ের বর্তমান ট্রেনগুলোর অধিকাংশই সর্বোচ্চ ৭৫ কিলোমিটার গতিবেগে চলাচল করে। কোরিয়া থেকে আমদানি করা শক্তিশালী ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার গতিবেগের ইঞ্জিনগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারবে না রেলওয়ে। মূলত দীর্ঘদিনের পুরনো রেলপথ ও অবকাঠামোগত ত্রুটির কারণে ৭০ থেকে ৭৫ কিলোমিটারে সীমাবদ্ধ থাকবে কোরিয়ান অত্যাধুনিক এসব ইঞ্জিনের ব্যবহার।
রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের সূত্রে জানা গেছে, রেলে গতি আনতে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কোরিয়া থেকে ১০টি অত্যাধুনিক ইঞ্জিন আনা হয়। দ্রুতগতি সম্পন্ন এ ইঞ্জিনগুলো যুক্ত হচ্ছে পূর্বাঞ্চলের বহরে। যাত্রীবাহী ট্রেনের পাশাপাশি পণ্যবাহী ট্রেনে এ ইঞ্জিন সংযুক্তের পরিকল্পনা ছিল। সে পরিকল্পনা থেকে গত বুধবার প্রথম পণ্যবাহী ট্রেনে একটি ইঞ্জিন যুক্ত করা হয়। প্রথম দিনেই গতি এসেছে পণ্য পরিবহনে। পূর্বের চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে ছুটেছে নতুন ইঞ্জিনের কনটেইনার বোঝাই ট্রেনটি। ১২ ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছেছে গন্তব্যে। এতে করে সময় সাশ্রয় হবে, বাড়বে ট্রিপ সংখ্যাও। ফলে রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে। কারণ, রেলের বৃহৎ আয়ের একটি পণ্য পরিবহন খাত। তাইতো, রাজস্ব বাড়াতে এবং পণ্য পরিবহনে গতি আনতে নতুন ইঞ্জিন বহর থেকে আরও ২টি ইঞ্জিন যুক্ত করা হবে এ খাতে। বাকি ইঞ্জিনগুলোও ধীরে ধীরে ট্রায়াল শেষে যুক্ত হবে যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোতে। পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী (সিএমই) ফকির মো. মহিউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নতুন এই ইঞ্জিন বা লোকোমোটিভগুলো ডিসেম্বরের মধ্যে রেলসেবায় যুক্ত হবে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী বছর একই রকম আরও ২০টি লোকোমোটিভ সংযোজন করা হবে বলে আশা করা যায়। রেল পরিষেবা উন্নয়নে বর্তমান সরকারের পরিকল্পিত কর্মকা- আরও বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে উন্নতমানের ২০০টি মিটারগেজ কোচ এসেছে। এই কোচগুলো দিয়ে ইতিমধ্যে ছয়টি ট্রেন নতুন রূপে প্রতিস্থাপন করেছি এবং যাত্রীরা আগের চেয়ে অনেক উন্নতমানের সেবা পাচ্ছে। এর আগে সম্প্রতি কোরিয়া থেকে আনা হয় ১০টি ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিনগুলো অত্যন্ত গতিশীল, আধুনিক এবং মানসম্মত। ইঞ্জিনগুলোর কমিশনিং হবে ডিসেম্বরের মধ্যেই। তবে এই ইঞ্জিন আন্তনগর এবং দূরপাল্লার ট্রেনে ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে রেল কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ে যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশের মধ্যে মিটারগেজ রেলপথে সর্বোচ্চ ৭৫ কিলোমিটার (ভালো ট্র্যাক সংবলিত সেকশনে) গতিবেগে ট্রেন চলাচল করে।অপর দিকে ব্রডগেজ রেলপথের প্রস্থ বেশি হওয়ায় ওখানকার ট্রেনের সর্বোচ্চ গতিবেগ ৮০ থেকে ৮৫ কিলোমিটার। তবে সারা দেশের অধিকাংশ সেকশনেই গড়ে ৫৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করে রেলওয়ে। মূলত নতুন কোচ ও ইঞ্জিনের ব্যবহার ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও পুরনো ট্র্যাক, রেলপথে পাথরহীনতায় সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।