মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

আখচাষিদের কান্না থামছে না

নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশের হুমকি

নজরুল মৃধা, রংপুর

ছয়টি চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে প্রায় ২ লাখ আখচাষি চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন। তাদের কান্না থামছে না। তারা জমিতে দন্ডায়মান আখ নিয়ে কী করবে এ নিয়ে দিশাহারা হয়ে মিল চালু রাখার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে।  এদিকে মিল চালু রেখে আখ মাড়াইয়ের দাবিতে আন্দোলনরত নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ হয়রানি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া চাষিদের আখ পার্শ্ববর্তী অন্য চিনি কলে নিয়ে মাড়াই করা হবে এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছে না তারা। চাষিরা মনে করছেন অন্য মিলে আখ দিলে মাড়াইয়ে ছয় মাসের বেশি সময় লাগবে। ওই সময়রে মধ্যে আখ শুকিয়ে যাবে। আখের মূল্য প্রাপ্তি নিয়ে অনিশ্চিয়তা রয়েছে। মিল বন্ধের প্রতিবাদে শ্যামপুরে মঙ্গলবার অর্ধ দিবস হরতাল ডেকেছে আখচাষি সংগঠনসহ সংশ্লিষ্টরা। সূত্র মতে, রংপুরের শ্যামপুর সুগার মিল, পাবনা সুগার মিল, পঞ্চগড় সুগার মিল, সেতাবগঞ্জ সুগার মিল, রংপুর সুগার মিল ও কুষ্টিয়া সুগার মিলে এ বছর চিনি উৎপাদনের কাজ বন্ধ থাকবে। সংস্কার ও আধুনিকায়নের উদ্দেশেই কারখানাগুলো আপাতত বন্ধ করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এদিকে মিল চালু রাখার দাবিতে মিল এলকায় প্রতিদিনই মানববন্ধন সভা সমাবেশ হচ্ছে। সূত্রমতে, ৬ মিলের প্রতিটি মিল এলাকায় গড়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার আখচাষি রয়েছেন। ৬টি মিল এলাকায় ২ লাখ বেশি চাষি এবার ৪০ হাজার একরের বেশি জমিতে আখ আবাদ করেছেন। জমিতে দন্ডায়মান এসব আখের মূল্য সাড়ে পাঁচশ কোটি টাকার ওপর। এসব আখ পার্শ্ববর্তী মিলে বিক্রি করার কথা বলা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী মিলে নিয়ে গিয়ে আখ দিলে আখের গুণগত মানও নষ্ট হয়ে যাবে। এ ছাড়া ৬টি মিলে ২ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী চোখে-মুখেও চাকরি হারানো আতঙ্ক রয়েছে। সেগুলোতে গড়ে ৬০০ থেকে ৮০০ শ্রমিক কাজ করে।

সেই হিসাবে ৬টি চিনি কল বন্ধ হয়ে গেলে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

শ্যামপুর চিনিকলে প্রায় ২০ হাজার চাষি চুক্তিবদ্ধ হয়ে এবার প্রায় সাড়ে ৬ হাজার একর জমিতে আখ চাষ করেছেন। যার আনুমানিক মূল্য ৭৫ কোটি টাকার ওপর। এসব আখের কী হবে তা এখনো জানেন না চাষিরা।

শ্যামপুর আখচাষি ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমাদের আন্দোলন থামাতে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সোমবার রাতে আমার এবং আরও কয়েকজন নেতার বাড়িতে গিয়ে আন্দোলন না করার জন্য পুলিশ এসে হুমকি দিয়েছে। কিন্তু আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। তিনি আরও বলেন, বন্ধ হয়ে যাওয়া মিলগুলোর এলাকার আখ অন্য মিলে নিয়ে মাড়াই করতে বলা হয়েছে। এতে আখের আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাবে। চাষিরাও আখের দাম পাবেন না। এ ছাড়া বকেয়া টাকা কীভাবে পরিশোধ হবে তার কোনো নির্দেশনাও আসেনি।

শ্যামপুর সুপার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার বলেন, এই মৌসুমে মিল বন্ধ রাখার চিঠি পেয়েছি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর