শনিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

সেই যোদ্ধাদের দুর্ভোগ কমছেই না

যুক্তরাজ্য ফেরতদের কোয়ারেন্টাইনের জন্য দুই হোটেল চূড়ান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও সিলেট

সেই যোদ্ধাদের দুর্ভোগ কমছেই না

করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ভোগান্তি কমছেই না। সার্ভার ত্রুটি, জনবল সংকটে রিপোর্ট দিতে বিলম্ব, কখনো টাকা-নিবন্ধন করা ও নমুনা প্রদানের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা নিত্য ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে থাকে বিমানবন্দরের ঝামেলা। এত সব সমস্যা, ভোগান্তি ও দুর্ভোগ মাড়িয়ে করোনার রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হচ্ছে ‘রেমিট্যান্স যোদ্ধা’ খ্যাত প্রবাসীদের। বিদেশগামীদের অভিযোগ, দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদান উল্লেখযোগ্য। অথচ আমাদেরই নমুনা প্রদান থেকে শুরু করে বিমানবন্দর পর্যন্ত পদে পদে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। প্রায় ছয় মাস ধরে নমুনার রিপোর্ট দিয়েই ফ্লাইটে উঠছেন প্রবাসীরা। অথচ পুরো প্রক্রিয়াটি এখনো  পর্যন্ত শৃঙ্খলায় আসেনি।  জানা যায়, চট্টগ্রামে প্রবাসী প্রায় ১৫ লাখ। এর মধ্যে করোনার প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর থেকেই নানা কারণে বড় একটি অংশ দেশে ফিরে আসেন। পরে করোনা পরীক্ষার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে যাওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু একটি পয়েন্টে রেজিস্ট্রেশন ও একটি বুথ হওয়ায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। রয়েছে সার্ভার সমস্যা। সর্বশেষ গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার সার্ভার সমস্যার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েন বিদেশগামীরা। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘সেন্ট্রাল সার্ভারে ত্রুটির কারণে দুই দিন একটু সমস্যা দেখা দেয়। পরে সমস্যা সমাধান করা হয়। বিষয়টি কেন্দ্রীয়ভাবে হয়েছে। ফলে সেখানে আমাদের কোনো কিছু করার সুযোগ ছিল না।’ তিনি বলেন, আমরা উপজেলা পর্যায়, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে জনবল এনে রাতদিন কাজ করাচ্ছি। এর পরও কিছু সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রাণান্তকর চেষ্টা থাকে, বিদেশগামীদের যথাযথ সম্মানের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ করে রিপোর্ট দেওয়ার। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দেশে করোনায় আটকেপড়া আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ওমান, বাহরাইন, কাতার, কুয়েত, ইতালি, চীন, কোরিয়াসহ বেশ কিছু দেশের যাত্রীদের নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে গত ২৩ জুলাই থেকে সেই দেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। এজন্য ৭২ ঘণ্টা আগে নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হয়। গত ২৩ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৭ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ হয়েছে এক হাজার ৮৬ জনের। দৈনিক গড়ে ৭০০ থেকে ৯০০ জন পর্যন্ত বিদেশগামীর নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। নমুনা দেওয়ার আগে সিভিল সার্জন অফিসে টিকিট, ভিসা এবং পাসপোর্ট দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করাতে হয়। বর্তমানে কেবল বিদেশগামীদের রেজিস্ট্রেশন, নমুনা সংগ্রহ এবং রিপোর্ট প্রদানে ৩২ জন কাজ করছেন। জানা যায়, গত বুধবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ হাজার ৪৪৪ জন। এদিকে যুক্তরাজ্য থেকে আসা যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য সিলেটে দুটি হোটেল চূড়ান্ত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে আরও কয়েকটি হোটেল চূড়ান্ত করবে প্রশাসন। এসব হোটেলে নিজ খরচে ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে যুক্তরাজ্য থেকে আসা যাত্রীদের। যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে সপ্তাহে দুটি ফ্লাইট সিলেট আসে। প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার ওসমানী বিমানবন্দরে আসে বিমানের এসব      ফ্লাইট। যুক্তরাজ্যে নতুন ধরনের করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের সঙ্গে আকাশ পথে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশে নতুন ধরনের করোনা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় যুক্তরাজ্য থেকে আসা যাত্রীদের নিজ খরচে বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। ২৮ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। যা গতকাল ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। এ নির্দেশনা কার্যকরের পর আগামী সোমবার যুক্তরাজ্য থেকে প্রথম ফ্লাইট সিলেট আসবে। সিলেটের জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম জানান, যুক্তরাজ্য থেকে সিলেট আসা যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়রেন্টাইনের জন্য দরগাগেট এলাকার হোটেল স্টার স্পেসিফিক ও হোটেল হলি গেট চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ছয়টি হোটেল দু-এক দিনের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে। একসঙ্গে ৬০০ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার মতো বন্দোবস্ত করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর