শনিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

রামেক হাসপাতালে থামছে না দালালচক্রের তৎপরতা

নাজেহাল রোগী ও স্বজনরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘিরে দালালদের তৎপরতা বেড়েছে। সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে গত ডিসেম্বর থেকে দালালদের ধরপাকড় শুরু হলেও থামছে না তাদের অপতৎপরতা। পুলিশি অভিযানে নিয়মিত হাসপাতালে প্রবেশ করতে না পারলেও দালালচক্র এখন নানাভাবে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের হুমকি দিচ্ছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, আগের চেয়ে দালালদের দৃশ্যমান উৎপাত কমলেও নেপথ্যে তারা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য তারা নতুন কৌশল হিসেবে হাসপাতালে ঢুকেই রোগী সেজে টিকিট করে নিচ্ছে। পুলিশ তাদের ধরলে টিকিটের কথা বলে সেবা নেওয়ার বিষয়ে জানাচ্ছে। তবে তাদের এই কৌশলটি ধরে ফেলেছে পুলিশ। অন্যদিকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন দোকানে অবস্থান করেও তারা কার্যক্রম চালাচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে চলছে নিয়মিত অভিযান। চিহ্নিত করা হচ্ছে দালালদের, করা হচ্ছে তালিকাও। হাসপাতালে দালালদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযানে কাজ করছেন নগরীর রাজপাড়া থানা পুলিশের সদস্যরা। আর প্রাথমিক অবস্থায় তাদের ধরতে সক্রিয় থাকছেন লক্ষ্মীপুর পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা। তবে দালালদের কাজে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় লক্ষ্মীপুর পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাম না প্রকাশের শর্তে এক পুলিশ সদস্য এ তথ্য জানিয়েছেন। রাজপাড়া থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দালালদের সহযোগিতা করছেন স্থানীয় কিছু ব্যক্তি। হাসপাতালের বাইরে ফুটপাথের দোকানগুলো পুলিশ কয়েক সপ্তাহ আগে সরিয়েছে। অবৈধ দোকানগুলোতে ব্যাপক যানজট ছিল ও দালালরা বসে বসে রোগী চিহ্নিত করত। কিন্তু নতুন করে ওইসব দোকান বসানোর জন্য স্থানীয় দালাল সিন্ডিকেট পুলিশের কাছে তদবির শুরু করছে। পুলিশ জানায়, জনস্বার্থে ওই দোকানগুলো সরিয়ে হাসপাতালের সুন্দর পরিবেশ ফেরাতে কাজ করা হচ্ছে।   সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দালালদের জন্য কঠোর আইন করা যায়। এদের শাস্তি দিলে হাসপাতালের পরিবেশ ঠিক রাখা সম্ভব হবে। রাজশাহীর কয়েকজন আইনজীবী বলেন, রামেক হাসপাতালে দালালচক্র আছে। এরা নগরীর বিভিন্ন বে-সরকারি হাসপাতাল, প্যাথলজি ও ফার্মেসিতে রামেক হাসপাতালের রোগী নিয়ে প্রতারণা করছে দীর্ঘদিন থেকে। তাদের বিচারে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই! তবে ৪২০ ধারায় তাদের প্রতারণার সাজা দেওয়া যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়েক বছর থেকেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেপরোয়া দালালচক্র। মাঝে মধ্যেই রোগী ও স্বজনদের প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনাও ঘটছে। এ অবস্থায় মাঝে মাঝে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা হয়। দালালদের আটক করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। তবে জামিনে খুব সহজেই মুক্তি পায় তারা। এরপর আবারও দালালি শুরু করে। গত ১৩ ডিসেম্বর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের চিকিৎসা নিতে আসা এক নারী রোগীকে বেদম পিটিয়েছিল দালালরা। এরপর থেকেই হাসপাতাল দালাল মুক্ত করার নির্দেশ দেন কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল ঘুরে দেখা গিয়েছে আগের চেয়ে দালালদের সংখ্যা কমলেও বাইরে তৎপরতা রয়েছে। দালালচক্র হাসপাতালের বাইরে থেকে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। নগর জাসদের সহ-সভাপতি মোস্তাক আহমেদ জানান, হাসপাতালের পরিবেশ ঠিক রাখতে দালাল নির্মূল করা গুরুত্বপূর্ণ। তারা অসহায় রোগী-স্বজনদের সঙ্গে প্রতারণা করে ক্ষতি করছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে শাস্তি দিতে হবে। আর হাসপাতাল  প্রশাসনকে সব সময় কঠোর নজরদারির মধ্যে থাকতে হবে। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, দালালদের ধরতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। নিয়মিত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। হাসপাতাল দালালমুক্ত করার জন্য অভিযান থাকবে। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজউদ্দিন বলেন, ‘হাসপাতাল দালালমুক্ত করার জন্য হাসপাতালে কর্মরতদের সঙ্গে কাজ করছি। চিকিৎসকসহ দায়িত্বরতদের নিয়ে আমরা কথা বলেছি। হাসপাতালে যেন দালাল না থাকে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছি। দায়িত্বরত আনসার ও পুলিশ সদস্যরা হাসপাতালে যেন দালাল না ঢুকে সে বিষয়ে কাজ করছেন।’

সর্বশেষ খবর