বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

কৃষি নিয়ে রেলের মহাপরিকল্পনা

হবে ডাবল গেজ, যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক লাগেজ ভ্যান

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহী অঞ্চলের কৃষিপণ্যকে সহজেই অভ্যন্তরীণ বাজারে নিতে নানামুখী প্রকল্প হাতে নিয়েছে রেল। নাটোরের আবদুলপুর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর পর্যন্ত ১০৪ কিলোমিটার রেলপথে নির্মাণ করা হবে ডাবল লাইন। এডিবির অর্থায়নে এই প্রকল্পটির সম্ভাবতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হবে শিগগিরই। এর আগে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বহরে যুক্ত হতে যাচ্ছে অত্যাধুনিক লাগেজ ভ্যান। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বৃহৎ নগরগুলোতে নিতে এ উদ্যোগ। তবে এ পদ্ধতি চালু করার দিনক্ষণ এখনো নির্ধারণ হয়নি। জানা গেছে, দেশের বহু রুটে মিশ্র গেজ রেলপথ চালু আছে। শুধু পশ্চিমাঞ্চলের নাটোরের আবদুলপুর পর্যন্ত ব্রডগেজ ও মিটারগেজ রেললাইন। আবদুলপুরের পরে রাজশাহী ও জেলা শহর চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর পর্যন্ত ব্রডগেজ থাকলেও নেই মিটারগেজ লাইন। তাই এ অঞ্চলের কৃষিপণ্য ও আম পরিবহনে উচ্চ ভাড়া গুনতে হয়। মিটারগেজ রেললাইন হলে রাজশাহী-চট্টগ্রামের মধ্যে যোগাযোগ সহজ হবে। পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান প্রকৌশলী আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, নাটোরের আবদুলপুর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর পর্যন্ত ১৫টি স্টেশন মিলিয়ে ১০৪ কিলোমিটার পথ। এই পথে ডাবল লাইন চালুর প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ১১টি প্রকল্পের মাধ্যমে কাজটি হবে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এতে অর্থায়ন করছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য সম্ভাবতা যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান খোঁজা হচ্ছে। রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু জানান, রেলপথটি মিটারগেজ করা হলে বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব হবে। এতে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। এদিকে উত্তরের কৃষিপণ্য অভ্যন্তরীণ বাজারে নিতে পশ্চিমাঞ্চল রেলের পাকশী বিভাগীয় বহরে যুক্ত হতে যাচ্ছে অত্যাধুনিক লাগেজ ভ্যান। লাগেজ ভ্যান চালু হলে কৃষকরা স্বল্প সময়ে অল্প খরচে তাদের উৎপাদিত পণ্য সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বাজারজাত করে লাভবান হবেন। দেশের শহরগুলোতে টাটকা কৃষিপণ্য সহজে পৌঁছানো যাবে। রেলওয়েতে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে।

২৮টি রেফ্রিজারেটর লাগেজ ভ্যানে পচনশীল দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করে দ্রব্যভেদে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা আছে। নতুন ১০টি মোটরভ্যান ১০টি স্পেশাল কার ক্যারিয়ার রেলবহরে সংযোজনের মাধ্যমেই বিদেশ থেকে আমদানি করা মোটরসমূহ চট্টগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে আসার সুযোগ থাকবে। লাগেজ ভ্যানগুলো উন্নত মানের বগি-সংবলিত বলে মিটারগেজে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার, ব্রডগেজে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতির লাগেজ ট্রেন চালানো হবে। আবার অটোমেটিক এয়ারব্রেক সিস্টেম ভ্যানগুলো আন্তনগর সব ট্রেনে সংযোজন করে দ্রুত ও নিরাপদভাবে চালানো সম্ভব হবে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলের পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন জানান, রেলওয়েতে বর্তমানে ৪১টি মিটারগেজ ও ১০টি ব্রডগেজ ভ্যান আছে, যেগুলো অনেক পুরনো। বর্তমানে লোকাল ও মেইল ট্রেনে ব্যবহৃত হয় এগুলো। তাই এসব ভ্যানে সেবা দেওয়া এখন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, রেলওয়ের রোলিং স্টক সংগ্রহের আওতায় ৭৫টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ লাগেজ ভ্যান সংগ্রহের জন্য এডিবির অর্থায়নে বাংলাদেশ রেলওয়ে উদ্যোগ নিয়েছে। একটি কোম্পানির মাধ্যমে ৭৫টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ লাগেজ ভ্যান সংগ্রহের জন্য ৩১ আগস্ট চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চলতি বছর জুলাই মাসে সব লাগেজ ভ্যান বাংলাদেশে পৌঁছানো শুরু হবে।

পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শাহীদুল ইসলাম জানান, গত কয়েক বছর কৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও কৃষকরা প্রতিযোগিতামূলক পরিবহন সুবিধার অভাবে ফসলের যৌক্তিক মূল্য পাচ্ছেন না। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উৎপাদিত শাক-সবজি, মৌসুমি ফল, ফুল এবং অন্যান্য পচনশীল দ্রব্য যেমন মাছ, মাংস, দুধ, দুগ্ধজাত খাবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব স্থানে সহজে স্বল্প মূল্যে পৌঁছে দেওয়া যাবে। লাগেজ ভ্যানে ট্রেনের মাধ্যমে কৃষিপণ্য পরিবহনের যদি সুযোগ সৃষ্টি হয়, কৃষক ও গ্রাহক উভয়ে উপকৃত হবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর