শনিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

চুক্তি শেষেও রেলের টিকিট বিক্রি করছে সিএনএস

দরপত্র ডেকেও কাউকে নিয়োগ দেওয়া যায়নি

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

২০০৭ সাল থেকে রেলের টিকিট বিক্রি করছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিএনএস (কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম) লিমিটেড। ২০১৪ সালের অক্টোবরে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে দ্বিতীয় দফা চুক্তি করে রেলওয়ে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। পরে কোম্পানিটির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে। কিন্তু তা ছয় মাস বাড়ানোর অনুমোদন দেয় সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। যা গত বছরের মার্চে শেষ হয়েছে। এখন চুক্তি ছাড়াই রেলের টিকিট বিক্রি করছে সিএনএস। দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হলেও আইনি জটিলতায় নতুন অপারেটর নিয়োগ দিতে পারেনি রেলওয়ে। আবার সিএনএসকে বাদ দিলে হাতে লিখে টিকিট বিক্রি করতে হবে রেলওয়েকে। ফলে রেলের সেবায় বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে এ আশঙ্কায় মৌখিক নির্দেশে সিএনএসকে টিকিট বিক্রি চালিয়ে নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে রেলওয়ে। তবে বৈধ কোনো চুক্তি না থাকায় সিএনএসকে রেলওয়ে এ সংক্রান্ত কোনো বিল দিতে পারছে না। জানা গেছে, ২০০৭ সালে রেলের টিকিট বিক্রিতে প্রথম দফা সিএনএসের সঙ্গে ৯ কোটি ৯১ লাখ টাকায় চুক্তি হয়। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় ২০১২ সালে। তবে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি, স্টপেজ বৃদ্ধি, কোচ ও আসন বৃদ্ধির কারণে পাঁচ বছর শেষে চুক্তি মূল্য দাঁড়ায় ১৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। তবে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনক্রমে চুক্তির মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়। পরেবর্তী সময়ে দরপত্র আহ্বান করা হলে আবারও কাজ পায় সিএনএস। ২০১৪ সালের অক্টোবরে পাঁচ বছরের জন্য এ সংক্রান্ত চুক্তি করা হয়। তখন চুক্তিমূল্য ছিল ৩১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। যদিও ট্রেনের সংখ্যা, স্টপেজ, কোচ ও আসন বৃদ্ধির কারণে পাঁচ বছর শেষে চুক্তিমূল্য দাঁড়ায় ৪১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। নতুন অপারেটর নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় সে সময়ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে ২০ শতাংশ বা ১২ মাস চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠায় রেলওয়ে। কিন্তু এ প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা। ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি মতামত দেয়, চুক্তির ক্ষেত্রে মেয়াদের পরিবর্তে মূল্য বিবেচনা করতে হবে। সে হিসাবে চুক্তিমূল্য ৩১ কোটি ৩২ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। যার শেষ শেষ হয়েছে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। ফলে চুক্তিমূল্য সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ তথা ১৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকার আনুপাতিক চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। ফলে বর্ধিত চুক্তির মূল্য দাঁড়ায় ৪৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এ হিসাবে অবশিষ্ট চুক্তিমূল্য ছিল ৫ কোটি ৮ লাখ টাকা। ফলে বর্ধিত এ চুক্তিমূল্য দিয়ে মাত্র ছয় মাস চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো যায়, যা গত বছর মার্চে শেষ হয়েছে। এরপর থেকেই চুক্তি ছাড়া রেলের টিকিট বিক্রি করে যাচ্ছে সিএনএস। পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ ভূঁইয়া জানান, টিকিট কারা বিক্রি করবে, তা মন্ত্রণালয়ের বিষয়।

যেহেতু এ সংক্রান্ত নতুন কোনো নির্দেশনা তাদের কাছে নেই, ফলে এসব বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না।

এদিকে, ২০১৯ সালে রেলের টিকিট বিক্রির জন্য নতুন অপারেটর নিয়োগের কার্যক্রম শুরু করা হয়। করোনার কারণে তা কিছুটা পিছিয়ে গেলেও গত বছর শেষ দিকে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

এক্ষেত্রে কাজ পায় ‘সহজ’। কিন্তু দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়া যথাযথ হয়নি অভিযোগ এনে এর বিরুদ্ধে সিপিটিইউতে (সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট) আবেদন করে সিএনএস। এ ছাড়া হাই কোর্টে রিট করলে পুরো প্রক্রিয়ার ওপর স্থগিতাদেশ দেয় হাই কোর্ট। ফলে নতুন অপারেটরও নিয়োগ দিতে পারছে না রেলওয়ে। এ অবস্থায় চুক্তি ছাড়াই শুধু মৌখিক নির্দেশে সিএনএস সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

তবে পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ জানান, নতুন করে চুক্তি ও নতুন কাউকে নিয়োগের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের। ফলে মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। যেহেতু নতুন কাউকে নিয়োগ করা হয়নি, ফলে আগের প্রতিষ্ঠানটি টিকিট বিক্রির কাজটি করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর