শুক্রবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বৃদ্ধাকে নির্যাতনকারী সেই গৃহকর্মী গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঠাকুরগাঁও থেকে ধরা পড়ল ভয়ঙ্কর সেই গৃহকর্মী রেখা। বৃদ্ধা গৃহকর্ত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার পরই ঢাকা ছেড়ে সে পালিয়ে ছিল ঠাকুরগাঁওয়ে। বুধবার মধ্যরাতে রাজধানীর শাহজাহানপুর থানা পুলিশের একটি দল ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল ও বালিয়াডাঙ্গি থানার সীমান্তবর্তী কাশিপুরের চিকনমাটিয়া মধ্যপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় গৃহকর্মীর স্বামী এরশাদকে রাজধানীর উত্তর বাসাবো এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপকমিশনার (ডিসি-মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন জানান, মামলার অভিযোগকারী ১৭ জানুয়ারি রাজধানীর মালিবাগের নিজ বাসায় তার বোন, বৃদ্ধ মা (ভিকটিম) ও গৃহকর্মী রেখা আকতারকে রেখে ব্যক্তিগত কাজে বরিশাল যান।

১৮ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টায় ব্যাংকের কাজে বাসার বাইরে যান অভিযোগকারীর বোন। এ সুযোগে গৃহকর্মী রেখা ভিকটিম বৃদ্ধাকে একা পেয়ে লোহার রড দিয়ে বেদম মারধর করে গুরুতর জখম করে। এরপর নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, টেলিভিশনসহ আনুমানিক ২১ লাখ টাকার মালামাল চুরি করে পালিয়ে যায় সে। গৃহকর্মী রেখা এক বছরের বেশি সময় ধরে ওই বাসায় কাজ করে আসছিল। সম্প্রতি ওই গৃহকর্মীর স্বামী এরশাদ দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ের পর টাকার জন্য তিনি রেখাকে চাপ দেন। এরশাদের প্ররোচনায় রেখা মারধর করে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যায়।

এদিকে শাহজাহানপুর থানা পুলিশ জানায়, ঘটনার পর প্রথমে ঢাকার ডেমরায় আশ্রয় নেয় রেখা। পরে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পালিয়ে যায় ঠাকুরগাঁওয়ে মামার বাড়িতে। চুরি করা টাকার মধ্যে ১ লাখেরও বেশি খরচ করে ফেলেছে রেখা। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৬০ হাজার টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল ফোন।

সিসিটিভি ফুটেজে ঘটনার বিবরণে দেখা যায়, ওই বৃদ্ধাকে নগ্ন করে চরম নির্যাতন চালায় গৃহকর্মী রেখা। তিন বছর ধরে কিডনিসহ নানা সমস্যায় ভুগছেন বিলকিস বেগম নামে ওই বৃদ্ধা। সেবা করার নামে জোর করে বিলকিস বেগমকে বাথরুমে ঢোকায় রেখা। সেখানে খুলে ফেলে তার শরীরের সব কাপড়। শীতের সকালে বৃদ্ধার গায়ে ইচ্ছেমতো ঢালে ঠান্ডা পানি। বাথরুম থেকে ওই বৃদ্ধা বেরিয়ে এলে লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করে রেখা। মার খেয়ে মেঝেতে পড়ে গেলেও ক্ষান্ত হয়নি রেখা। একের পর এক আঘাত করে বৃদ্ধার মাথায়। একপর্যায়ে হাতের কাছে যা পেয়েছে তা দিয়েই চালিয়েছে নির্যাতন। আলমারির চাবির জন্য বৃদ্ধার বুকের ওপর চেপে বসে ওই গৃহকর্মী। বঁটি হাতেও তেড়ে আসে সে। এসব কিছুর মধ্যেই তার চোখ ছিল আলমারিতে। একসময় অসহায়ের মতো আত্মসমর্পণ করেন বৃদ্ধা বিলকিস বেগম। বৃদ্ধার গলা থেকে চেইন খুলে রেখা আয়েশি ভঙ্গিতে পরখ করে নেয় হাতের বালা। এরপর আলমারির চাবির সন্ধান পায় নিষ্ঠুর গৃহকর্মী রেখা। কিন্তু খুলতে না পেরে রক্তাক্ত বৃদ্ধাকে টেনে নিয়ে বাধ্য করে আলমারি খুলে দিতে। ড্রয়ার খুলে স্বর্ণ, নগদ টাকা, মোবাইল ফোন সবই নিয়ে নেয় রেখা। পুরোটা সময় বিবস্ত্র অবস্থায় বৃদ্ধা বিলকিস রক্ত থামাতে নিজের হাতেই মাথায় বাঁধেন কাপড়। সব হাতানোর পর বৃদ্ধাকে কক্ষে রেখে বাইরে থেকে তালা দেয় রেখা। তারপর খুলে নেয় অন্য কক্ষের টিভি। নিয়ে আসে ব্যাগ। সবকিছু গুছিয়ে ফাঁকা বাসায় আহত বৃদ্ধাকে ফেলে বেরিয়ে যায় ভয়ঙ্কর এই গৃহকর্মী।

গ্রেফতার অভিযানের পর ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার (এসপি) জাহাঙ্গীর আলম জানান, গৃহকর্ত্রী নির্যাতনের ঘটনার পর ঢাকা থেকে বার্তা পেয়ে পুলিশ বিশেষ অভিযান চালায়। প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকা থেকে আসা পুলিশের একটি টিম তাকে গ্রেফতার করে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর