শুক্রবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বিমানবন্দরে চাকরির নামে প্রতারণা, গ্রেফতার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্মাণাধীন টার্মিনাল-৩ এ চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র দেখিয়ে ১৫০ জনের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দর্পণ গ্রুপ নামের একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান। টার্মিনালের শ্রমিক ও সুপারভাইজার পদে চাকরি পেতে জনপ্রতি ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন তারা। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে চক্রের মূল হোতাসহ ওই প্রতিষ্ঠানের তিন প্রতারককে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- দর্পণ গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম সোহাগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেনা জহির ও ম্যানেজার মিন্টল রায় ওরফে অপূর্ব রায়। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক। তিনি বলেন, ভুয়া এই প্রতিষ্ঠানটি স্যামসাং গ্রুপের নামে একটি ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডার প্রস্তুত করে।

পরে তাদের অফিসের সামনে ডিজিটাল ব্যানারে ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩ এ দক্ষ ও অদক্ষ লেবার ও সুপারভাইজার নিয়োগ দেওয়া হবে’ এমন বিজ্ঞাপন ঝুলিয়ে রাখে। চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দেখে চাকরিপ্রত্যাশী ভুক্তভোগী অনেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। লেবার হিসেবে জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা এবং সুপারভাইজার পদে ১ লাখ টাকায় চুক্তি করে প্রতারকরা।

শ্রমিক ও সুপারভাইজার পদে চাকরি পাওয়ার জন্য ১০০ থেকে ১৫০ চাকরিপ্রত্যাশী দর্পণ গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান এবং এমডির কাছে টাকা দিলে তাদের ভুয়া নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। তবে নিয়োগপত্রে যোগদানের নির্দিষ্ট তারিখে কোনো শ্রমিক ও সুপারভাইজারকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্মাণাধীন টার্মিনাল-৩ এ যোগদান করায়নি প্রতারকরা।

সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ভুক্তভোগীরা দর্পণ গ্রুপ কোম্পানির অফিসে গিয়ে চাকরিতে যোগদানের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা অপেক্ষা করার কথা বলে ঘোরাতে থাকে। পরে খোঁজ নিয়ে ভুক্তভোগীরা জানতে পারেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩ এ চাকরি দেওয়ার জন্য আসামিদের কোম্পানি অথবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে স্যামসাং কোম্পানি কোনো ওয়ার্ক অর্ডার দেয়নি।

ভুক্তভোগী সুজন বলেন, যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে দিয়ে যাওয়ার পথে সরকার মার্কেটের তিনতলায় ডিজিটাল ব্যানার লাগানো দেখেন তিনি। এতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া ছিল। আগ্রহী হয়ে কথা বলতে যান তিনি। দর্পণ নামে ওই অফিস থেকে জানানো হয়, সুপারভাইজার পদে ১ লাখ, অদক্ষ শ্রমিকের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা দিলেই চাকরি হবে। আগ্রহ প্রকাশ করলে দুই দিন পর ভাইভা নেয়, নভেম্বরের ৩০ তারিখের মধ্যে তিনজনকে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে হাতে নিয়োগপত্র ধরিয়ে দিয়ে নেয় আড়াই লাখ টাকা।

এরপর থেকে তারা ঘোরাতে থাকে। নভেম্বর মাস পেরিয়ে গেলেও চাকরি হয় না। প্রতারকরা করোনা টেস্টের কথা বলে আরও ৫ হাজার করে টাকা নেয়। আবারও যোগদানের তারিখ দিতে ঘোরাতে থাকে। তাদের সন্দেহ হলে সবাই বিমানবন্দরে যান। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ক পারমিট পায়নি। চক্রটি দীর্ঘদিন চাকরিপ্রত্যাশীর সঙ্গে প্রতারণা করে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। ভাটারা থানায় ভুক্তভোগীদের করা একটি মামলায় তাদের তিনজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের ধরতে অভিযান চলছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর