রবিবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ভোটের হিসাবে দোলাচলে বিএনপি

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

ভোটের হিসাবে দোলাচলে বিএনপি

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ভোটের দিন ‘সেন্টার কমিটি’ ছাড়াও প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে সক্রিয় ছিল বিএনপির কয়েকশ নেতা-কর্মী। কিন্তু ভোটের হিসাবের পর দেখা গেছে, প্রায় অর্ধেক কেন্দ্রেই ভোটের ‘হাফ সেঞ্চুরি’ পূরণ করতে পারেনি বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী। সক্রিয় নেতা-কর্মী ও ভোটের হিসাব মিলাতে গিয়ে  নির্বাচন শেষে দোলাচলে পড়েছে বিএনপি। এ নিয়ে নিজেদের মধ্যেই সৃষ্টি হয়েছে অনাস্থা ও অবিশ্বাস।

বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে বিএনপির সমর্থকদের কথা বাদ দিলেও সক্রিয় নেতা-কর্মী রয়েছে পাঁচ থেকে ৬শ। অথচ অর্ধেকেরও বেশি কেন্দ্রে দেখা গেছে ৫০টিও ভোট পায়নি।

ইভিএম কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচনের ভোটের হিসাবই পরিবর্তন করে দিয়েছে কমিশন। বৃহত্তর বাকলিয়া সব সময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। অতীতের কোনো নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এ এলাকায় জিততে পারেনি। এ নির্বাচনে দেখা গেছে, কোনো কোনো কেন্দ্রে বিএনপি পেয়েছে ১০ থেকে ১১ ভোট।  

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একাধিক নেতা জানান, ভোট গ্রহণকালে বিএনপি ও অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের নেতারা ভোট দিলেও কেন্দ্রে কেন্দ্রে তিন থেকে চার শ ভোট পাওয়ার কথা ছিল বিএনপির মেয়র প্রার্থীর। অথচ বেশিরভাগ কেন্দ্রে পেয়েছে পঞ্চাশের নিচে। এতে  বোঝা যায় এসব কেন্দ্রে নেতা ও তাদের পরিবার-পরিজন ভোট দিতে যায়নি।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির বলেন, নির্বাচনে পরাজয় হতে পারে কিন্তু এত কম ভোট পাওয়ার মতো দলে এখনো পরিণত হয়নি বিএনপি।

জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর ভোটের হিসাব নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে বিএনপির ঘরে। বিএনপির দাবি নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিটি সেন্টারে সক্রিয় ছিল বিএনপি সেন্টার কমিটি। এসব কমিটিতে সর্বনিম্ন ১০০ জন থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০০ জন ছিল। সেন্টার কমিটির বাইরেও প্রতিটি কেন্দ্রে সক্রিয় ছিল বিএনপি, মহিলা দল, যুবদল, ছাত্রদল এবং অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের কমপক্ষে ৩০০ থেকে ছয় শতাধিক নেতা-কর্মী। চসিক নির্বাচনে ৭৩৫ কেন্দ্রের মধ্যে ৭৩৩ কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। অথচ  বিএনপির প্রাপ্ত ভোটের হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৩৫৯টি কেন্দ্রে ভোটের ‘হাফ সেঞ্চুরি’ করতে পারেনি বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। এসব কেন্দ্রের মধ্যে শূন্য ভোট পেয়েছে ২ কেন্দ্রে, ১ থেকে ৫ ভোটের কম পেয়েছে ১০৮ কেন্দ্রে, ৬ থেকে ১০ ভোটের কম পেয়েছে ৬৪ কেন্দ্রে, ১১ থেকে ১৫ ভোটের কম পেয়েছে ৫৭ কেন্দ্রে, ১৬ থেকে ২০ ভোট পেয়েছে ৩৯ কেন্দ্রে, ২১ থেকে ২৫ ভোট পেয়েছে ৩১ কেন্দ্রে, ২৬ থেকে ৩০ ভোট পেয়েছে ১৫ কেন্দ্রে, ৩১ থেকে ৩৫ ভোট পেয়েছে ২৮ কেন্দ্রে, ৩৬ থেকে ৪০ ভোট পেয়েছে ৪ কেন্দ্রে এবং ৪১ থেকে ৫০ ভোট পেয়েছে ১১ কেন্দ্রে।

তবে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাতের দাবি, যেসব কেন্দ্রে পঞ্চাশের নিচে ভোট পেয়েছি সেগুলোতে আগের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের চিত্র ছিল ভিন্ন।

বেশিরভাগ কেন্দ্রে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে ভোটে অনেক এগিয়ে ছিল। ওই কেন্দ্রগুলোর কোনোটিতেই হাজারের নিচে ভোট পায়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর