সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ভান্ডারিয়ার বাদল হত্যার সব আসামি খালাস

লিবিয়ায় মানব পাচারে চার অভিযুক্তের জামিন স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার ভিটাবাড়িয়া গ্রামের বাদল সরদার হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতে দন্ডিত সব আসামিকে খালাস দিয়েছে হাই কোর্ট। গতকাল বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিনের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদন্ডাদেশ অনুমোদন) খারিজ এবং আসামিদের আপিল গ্রহণ করে এ রায় দেয়। এ মামলায় বিচারিক আদালত চার আসামিকে মৃত্যুদন্ড এবং তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছিল। আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফজলুল হক খান ফরিদ, শেখ আলী আহমেদ খোকন, মো. আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান। পরে ফজলুল হক খান ফরিদ বলেন, ঘটনার সময় এ মামলায় এক আসামি জেলে ছিলেন। কিন্তু একজন সাক্ষী জেলে থাকা আসামির বিরুদ্ধেও সাক্ষ্য দিয়েছেন। এতে বুঝা যায় সাক্ষী বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। এ রকম কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সব আসামি খালাস পেয়েছেন। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাতে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ভিটাবাড়িয়া গ্রামের জালাল সরদারের ছেলে বাদল সরদারকে কুপিয়ে হত্যা করে আসামিরা। এদিকে লিবিয়ায় মানবপাচার এবং পাচারের শিকার ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ঢাকায় করা মামলায় দুই আসামির জামিনের রায় বাতিল এবং অপর দুই আসামির জামিন স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আদালতে আসামিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।

গত বছর ২৮ মে লিবিয়ার মিজদাহ শহরে ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশী ২৬ বাংলাদেশি মানব পাচারকারীদের হাতে নিহত হন। একই ঘটনায় আহত হন আরও ১১ বাংলাদেশি। ওই ঘটনায় দেশে-বিদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ঘটনার পর ২ জুন রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে এবং হত্যার অভিযোগে মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন ফ্লাইওভার ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস লিমিটেডের মালিক দুই ভাই শেখ মো. মাহবুবুর রহমান ও শেখ সাহিদুর রহমান।

পরে শেখ ভ্রাতৃদ্বয় হাই কোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। হাই কোর্ট তাদের আবেদনে রুল জারি করে। সেই রুলের শুনানি নিয়ে তাদের জামিন মঞ্জুর করা হয়। এদিকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি হিসেবে আটক হন কাউসার মুন্সী ও মাহবুব মুন্সী। তাদেরকে জামিন দিয়ে রুল জারি করে হাই কোর্ট।

পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করলে চেম্বার আদালত তাদের জামিনাদেশ স্থগিত করে। এর ধারাবাহিকতায় আবেদনগুলো প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চে আসে। গতকাল শুনানি শেষে আপিল বিভাগ শেখ মাহবুব ও শেখ সাহিদুরকে জামিন দিয়ে হাই কোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করেছেন। আর কাউসার মুন্সী ও মাহবুব মুন্সীর জামিনাদেশ স্থগিত করে বলে আইনজীবীরা জানান।

এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির বাবা বাদী হয়ে মামলা করেন। ২০০৩ সালে আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের এক আদেশে মামলাটি বিচারের জন্য পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়। বিচার শেষে ২০১৫ সালের ১ জুলাই ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ এস এম সোলায়মান রায় দেন। রায়ে ভান্ডারিয়া উপজেলার উত্তর ভিটাবাড়িয়া গ্রামের শহীদ শিকদার, দুলাল শিকদার, বাদল শিকদার ও নিজাম শিকদারকে মৃত্যুদন্ড এবং ভিটাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সালাম সরদার, উত্তর ভিটাবাড়িয়া গ্রামের হারুন শিকদার ও মিনু শিকদারকে যাবজ্জীবন দন্ড দেয় আদালত। আরও ছয় আসামিকে খালাস দেওয়া হয় রায়ে। পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদন্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাই কোর্টে পাঠানো হয়।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর