শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো বুড়িগঙ্গা তীরের শতাধিক স্থাপনা

ফের নদী দখলমুক্ত করতে সাঁড়াশি অভিযান

নিজস্ব প্রতিবেদক

গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো বুড়িগঙ্গা তীরের শতাধিক স্থাপনা

করোনার প্রভাব কিছুটা কমতেই ফের নদ-নদী দখলমুক্ত করতে সাঁড়াশি অভিযানে নামছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। পুনর্দখল রোধে বিশেষ উচ্ছেদ অভিযানে নেমে গত দুই দিনে বুড়িগঙ্গা তীরের ১১০টি অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। দখলমুক্ত করা হয়েছে দুই একর তীরভূমি। গতকাল পুরান ঢাকার কামালবাগের চেয়ারম্যানঘাট থেকে সোয়ারীঘাটের কাছে বালুর ঘাট পর্যন্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে বহুতল ভবনসহ ৫১টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। আগের দিন একই এলাকায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় নদীর তীর দখল করা ৫৯টি স্থাপনা।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অভিযানে চারটি চারতলা ও একটি তিনতলা টিনশেড বিল্ডিং, দুটি দোতলা পাকা বিল্ডিং, দুটি একতলা পাকা মার্কেট, ২০টি আধাপাকা দোকান ঘর ও ২২টি টং ঘর উচ্ছেদ করা হয়। এতে অবমুক্ত হয় এক একর তীরভূমি। আগের দিনও অভিযান চালিয়ে পাঁচতলা ভবনসহ ৫৯টি স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে এক একর তীরভূমি দখলমুক্ত করা হয়। এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক (ঢাকা নদীবন্দর) গুলজার আলী বলেন, নদী পুনর্দখল রোধে সিএস ও আরএস অনুযায়ী  বিশেষ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।

নদীতীর পুরোপুরি দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। পাশাপাশি চলবে সীমানা পিলার বসানোর কাজ। এরপর নদীর তীরকে দৃষ্টিনন্দন করা হবে। পুনর্দখল ঠেকাতে আমাদের টিম সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে। পুনর্দখল পেলেই উচ্ছেদের পাশাপাশি আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, দেশের নদ-নদীগুলোকে অবৈধ দখলদারের হাত থেকে উদ্ধার করতে ২০১০ সাল থেকেই দেশব্যাপী অভিযান চলছে। এ সময়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে ২০ হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা, যার ৭০ ভাগই উচ্ছেদ করা হয়েছে ঢাকার আশপাশের নদীতীর থেকে। সরকারের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশনা ও হাই কোর্টের নির্দেশের (রিট পিটিশন নম্বর ৩৫০৩/২০০৯) ভিত্তিতে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি নদী দখলমুক্ত করতে সাঁড়াশি অভিযানে নামে বিআইডব্লিউটিএ। শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরীতে নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদে ঢাকা নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ অভিযান চালায়। ২৪ জুলাই পর্যন্ত ৬ মাসে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদের উভয় পাড়ের ১৫৭ কিলোমিটার তীরভূমিতে অভিযান চালিয়ে চার হাজার ৭৭২টি ছোট-বড় স্থাপনা উচ্ছেদ করে অবমুক্ত করা হয় দখলকৃত ১২১ একর তীরভূমি। বসিলা এলাকায় তুরাগের চ্যানেল বন্ধ করে গড়ে তোলা আমিন-মোমিন হাউজিং উচ্ছেদের পাশাপাশি ড্রেজিং করে চ্যানেলে পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হয়। বিআইডব্লিউটিএর দাবি, এখন পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ তীরের ৮০ ভাগ জায়গা দখলমুক্ত করা হয়েছে। বাকি জায়গা অচিরেই দখলমুক্ত করে স্থায়ী সীমানা পিলার বসানো হবে। বিআইডব্লিউটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পৃথকভাবে এ অভিযান পরিচালনা করবে। বিষয়টি সব জেলা প্রশাসনকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে দখল ও দূষণমুক্ত করে স্বচ্ছ পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি নদীর দুই পাড় দৃষ্টিনন্দন করতে সরকার এক বছর মেয়াদের ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’, তিন বছরের  ‘স্বল্পমেয়াদি’, পাঁচ বছরের ‘মধ্যমেয়াদি’ এবং ১০ বছরের ‘দীর্ঘমেয়াদি’  মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ‘বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদের তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়)’ প্রকল্পের অধীনে ২০২২ সালের মধ্যেই চার নদীর দুই পাড়ে ২২০ কিলোমিটারজুড়ে ১০০ বছর মেয়াদি স্থায়ী সীমানা পিলার স্থাপন, ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, আরসিসি সিঁড়ি, বসার বেঞ্চ, মালামাল ওঠানামার জেটি, ইকোপার্ক, সীমানা প্রাচীর, পানি নিষ্কাষণ ব্যবস্থা, সবুজ বেষ্টনীসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করা হবে। ইতিমধ্যে ঠিকাদারের মাধ্যমে সীমানা পিলার স্থাপনের কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে।

এদিকে করোনার কারণে নদী উদ্ধার অভিযান কিছুটা থমকে গেলেও ফের সাঁড়াশি অভিযানে নামতে যাচ্ছে দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো। নৌ-পরিবহন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি উচ্ছেদ করা হয়েছে তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। ক্ষমতাসীন দলের দুজন সংসদ সদস্যের অবৈধ দখলে থাকা স্থাপনাও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ৬৪ জেলা প্রশাসন ও সব বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে নদী উদ্ধারে নানা দিকনির্দেশনা দেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার। এ সময় তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে তালিকা করে ২৩ হাজার ৮০২টি স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। আমাদের উদ্ধারকৃত জমির পরিমাণ ১ হাজার একর। করোনায় উচ্ছেদ কার্যক্রম ধীরগতি পায়। শিগগিরই আমরা আবার তা শুরু করতে যাচ্ছি।

সর্বশেষ খবর