শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রত্ন পর্যটনে কুমিল্লার ব্যাপক সম্ভাবনা

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

প্রত্ন পর্যটনে কুমিল্লার ব্যাপক সম্ভাবনা

প্রত্ন পর্যটনে কুমিল্লার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। আরও কিছু প্রত্ন স্থাপনা খনন, হোটেল ও খাবার রেস্তোরাঁ স্থাপন করা হলে কুমিল্লা হয়ে উঠবে দেশের সেরা পর্যটন এলাকা। কুমিল্লা শালবন বৌদ্ধবিহার ও লালমাই পাহাড়কে ঘিরে এ সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে। সূত্রমতে, কুমিল্লা নগরীর কোটবাড়িতে ১৯৪৩ সালে ব্রিটিশ সরকার ৫৬টি প্রত্ন স্থাপনা শনাক্ত করে। এগুলো সপ্তম শতকের স্থাপনা। কারও মতে, সমতট রাজ্যের রাজধানী এই অঞ্চল। কারও মতে, বৌদ্ধ ধর্মের ধর্মীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে পড়তে আসত পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীরা। ১৯৫৬ সালে এখানে খনন শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ১৪টি স্থাপনা খনন করা হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- শালবন বৌদ্ধবিহার, ইটাখোলা মুড়া, রূপবান মুড়া, লতিকোট মুড়া, ভোজবিহার, আনন্দ বিহার, কুটিলা মুড়া, চারপত্র মুড়া, ময়নামতি ১, ২, ৩, রানী ময়নামতি প্রাসাদ ও সর্বশেষ খনন হাতিগাড়া মুড়া। খনন করা স্থাপনার সবগুলোর সৌন্দর্যবর্ধন করে টিকিটের আওতায় আনা হলে দর্শনার্থীদের আগ্রহ বাড়বে, বৃদ্ধি পাবে সরকারের রাজস্ব আয়। এদিকে লালমাই পাহাড়ে ঘুমিয়ে আছে ১৩০০ বছরের প্রাচীন আরও ৪৪টি স্থাপনা। এগুলোও খনন করে এখানে পর্যটনের নতুন দিগন্তের দ্বার খোলা যায়।

শালবন বৌদ্ধবিহার ও ময়নামতি জাদুঘরের একটি সূত্র জানায়, রানীর ময়নামতির প্রাসাদ থেকে চন্ডিমুড়া পর্যন্ত একটি প্রত্ন হাইওয়ে করা যেতে পারে। এতে এখানে পর্যটকের ঢল নামবে। কারণ নিকটবর্তী এতগুলো প্রত্ন স্থাপনা পৃথিবীর কম দেশেই আছে। প্রত্ন হাইওয়ে সবগুলো প্রত্ন সাইট ঘেঁষে অতিক্রম করবে। এ এলাকায় শুধু পর্যটকের পরিবহন চলবে। হাইওয়ে চালু হলে এ এলাকায় ১ হাজার রুমের একাধিক হোটেলও তখন চালু করা যাবে।

সম্প্রতি শালবন বৌদ্ধবিহারে দেখা যায়, অফিস খোলার দিনেও দর্শনার্থীর প্রচুর ভিড়। যে যার মতো ঘুরে দেখছেন। কেউ ছবি, কেউ সেলফি তুলছেন। একদল শিক্ষার্থী এসেছে ঢাকা তিতুমীর কলেজ থেকে। তারা গিটার নিয়ে বসে গান গাইছেন। তাদের একজন বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। সকালে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে কুমিল্লা সারা দিন ঘুরেফিরে বিকালে ফেরা যায়। তাই আমরা সময় পেলে এদিকে ঘুরতে আসি। দূরের দর্শনার্থীদের জন্য থাকার হোটেল ও খাবার রেস্তোরাঁ থাকলে দর্শনার্থীরা আরও বেশি ঘুরতে আসবেন। ঐতিহ্য কুমিল্লার পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল বলেন, প্রত্ন পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় জনপদ কুমিল্লা। এখানে বহু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। তা সত্ত্বেও সত্যিকার পর্যটন নগরী বলতে যা বোঝায় কুমিল্লা এখনো তা হয়ে ওঠেনি। এর অন্যতম কারণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং রাজনৈতিক  নেতাদের উদাসীনতা। এজন্য প্রত্ন স্থাপনা খনন, হোটেল ও খাবার রেস্তোরাঁ স্থাপন করতে হবে। এতে লালমাই পাহাড় ঘিরে কুমিল্লা হয়ে উঠবে দেশের সেরা পর্যটন এলাকা।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান বলেন, করোনার সময়েও এখানে দর্শনার্থীদের ভালো সমাগম হচ্ছে। প্রত্ন পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় অঞ্চল কুমিল্লা। এখানে বহু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে, যা এখনো খননের বাকি রয়েছে। এগুলো খনন হলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। এ ছাড়া হোটেল ও খাবার রেস্তোরাঁ স্থাপন হলে দর্শনার্থীদের আগ্রহ বাড়বে।

সর্বশেষ খবর