শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে ১৭ বছর পার

বরিশাল মহানগর যুবলীগ

রাহাত খান, বরিশাল

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নিষ্ক্রিয় বরিশাল মহানগর আওয়ামী যুবলীগ। ১৭ বছরেও গঠিত হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এ কারণে ঝিমিয়ে পড়েছে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। যুবলীগকে নতুন করে সংগঠিত করার দাবি জানিয়েছেন এই কমিটির নেতারা। ২০০৪ সালে নিজামুল ইসলাম নিজামকে আহ্বায়ক এবং মাহমুদুল হক খান মামুন ও মেজবাউদ্দিন জুয়েলকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৬৯ সদস্যবিশিষ্ট বরিশাল মহানগর যুবলীগের কমিটি গঠিত হয়। নিয়মানুসারে তিন মাসের মধ্যে মহানগরীর সব ওয়ার্ডে কমিটি দিয়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে মহানগর যুবলীগের কমিটি গঠনের বিধান রয়েছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং মূল দলের নেতাদের মতবিরোধের কারণে আটকে যায় মহানগর যুবলীগের কমিটি। কমিটি গঠনের ২ বছর পর আটজনকে কোঅপ্ট করা হয়। এ নিয়ে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সংখ্যা ৭৭ জন। এই কমিটির একজন সদস্য মারা গেছেন। গত ১৭ বছরে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন অনেকে। দলীয় কার্যক্রমে আহ্বায়ক কমিটির হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া তেমন কাউকে দেখা যায় না। বয়সের ভারে অনেকে ন্যুব্জ হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সময় যার বয়স ছিল ৪০ বছর, এখন তার বয়স ৫৭ বছর হওয়ায় যুবলীগের কার্যক্রমে অনীহা রয়েছে তাদের।

গত ১৭ বছরে একাধিকবার মহানগর যুবলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ বা নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই সময় ওই কমিটিতে পদ পেতে আগ্রহীরা অনুসারী নেতা-কর্মীদের নিয়ে দলীয় কার্যালয় সরগরম করতেন। নেতৃত্ব নিয়ে হতো নানা আলোচনা। এমনকি আহ্বায়ক কমিটির পক্ষ থেকে সম্মেলন করার অনুমতি চেয়ে কেন্দ্রেও লিখিত আবেদন জানানো হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে আজও হয়নি কমিটি গঠন।

এ ব্যাপারে আলাপকালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির একাধিক নেতা বলেন, মূলত তৎকালীন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী নেতাদের অসহযোগিতার কারণে এই কমিটি পূর্ণাঙ্গতা পায়নি। আওয়ামী লীগের তৎকালীন নেতৃত্বের দুই প্রভাবশালী নেতা কমিটি প্রশ্নে একমত হতে না পারায় পিছিয়ে যায় মহানগর যুবলীগের কমিটি গঠন।

এ অবস্থায় মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক নিজামুল ইসলাম নিজাম, তিন যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন, বি এম কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মেজবাউদ্দিন জুয়েল ও শাহিন সিকদার, সদস্য বি এম কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মো. জসিম উদ্দিনসহ সিনিয়র অনেক নেতা যুবলীগের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে রুটিরুজিতে ব্যস্ত। যুবলীগের কেন্দ্রঘোষিত ও স্থানীয় অনেক কর্মসূচিও পালিত হয় না বরিশালে। কখনো নামমাত্র কর্মসূচি হলেও দেখা যায় না সিনিয়র নেতাদের। তবে মেয়র অনুসারী কিছু যুবলীগ নেতাদের দিয়ে দায়সারা গোছের কর্মসূচি পালন করানো হয়। মহানগর যুবলীগের সদস্য সরকারি বরিশাল কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ফরহাদ বিন আলম জাকির বলেন, যুবলীগকে শক্তিশালী করতে হলে গণতান্ত্রিক উপায়ে কমিটি গঠনের বিকল্প নেই। এ কারণে স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকদের আন্তরিকতা প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে মহানগর যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন বলেন, যুবলীগ বরিশালে একসময় সক্রিয় ছিল। ১৭ বছরেও কমিটি গঠিত না হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়নি। সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য কেন্দ্রে চিঠি দেওয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে কোনো অগ্রগতি নেই। তবে বিভাগীয় সদর বরিশাল মহানগরে যুবলীগকে শক্তিশালী করতে সম্মেলনের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা যাচাই করে কমিটি গঠন একান্ত জরুরি বলে মত পোষণ করেন সদর আসনের এমপি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী খান মামুন। সংগঠনের আহ্বায়ক নিজামুল ইসলাম নিজামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, মহানগর যুবলীগের কমিটি হয়েছিল তিন মাসের জন্য। তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব নির্দিষ্ট সময়ে পালন করতে না পারলে আবারও কেন্দ্র থেকে তিন মাসের অনুমতি আনার বিধান রয়েছে। দীর্ঘদিনেও তারা কোনো সম্মেলন করতে পারেননি। পারেননি কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে। এখন এই কমিটির কোনো অস্তিত্ব নেই। এর আগে মহানগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কমিটি হালনাগাদের উদ্যোগ নিয়েছিল মহানগর আওয়ামী লীগ। কিন্তু মহামারী করোনার কারণে কমিটি গঠন পিছিয়ে গেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক এবং যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে শিগগিরই মহানগর যুবলীগের কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর