সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
চাঞ্চল্যকর আবদুল মজিদ হত্যা

নববধূর সহযোগিতায় মারপিটের পর শরীরে আগুন দেয় প্রেমিক

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার চৌবিলা চকপাড়া গ্রামের যুবক আবদুল মজিদ ২০১৮ সালের ২৩ মার্চ বিয়ে করেন একই গ্রামের আমজাদ হোসেনের মেয়ে আলপনা খাতুনকে। আবদুল মজিদ জানতেন না সদ্য বিয়ে করা প্রাণপ্রিয় নববধূর হাতেই তার মরণ লেখা রয়েছে। বিয়ের পরদিন ২৪ মার্চ নববধূ আলপনার হাত ধরে হাসিমুখে চলে যান শ্বশুরবাড়িতে। পরদিন আবদুল মজিদকে হাটচৌবিলা গ্রামে একটি নির্জন বাঁশঝাড়ের মধ্যে শরীর, গলার নিচ থেকে ডান পাশের কাঁধ, ডানা, কনুইসহ হাতের কবজির ওপর পর্যন্ত চামড়া পোড়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার তিন দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবদুল মজিদ মারা যান। বিয়ের পাঁচ দিনের মাথায় আবদুল মজিদের নির্মম হত্যার ঘটনা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। মজিদের বড় ভাই আবদুল মমিন বাদী হয়ে সলঙ্গা থানায় নববধূ আলপনাসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। আলপনার আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় মজিদের মৃত্যুর এক দিন পর তাকে আটকে পুলিশে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

প্রাথমিকভাবে আলপনা হত্যায় সহযোগিতার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু হত্যার মোটিভ জানা যায় না। এ অবস্থায় একই বছরের ১১ নভেম্বর আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন। পিবিআইর উপ-পরিদর্শক এসআই মো. রায়হান আলী মামলাটি তদন্তের পাশাপাশি আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আলপনার প্রেমিক মূল হত্যাকারী চকচৌবিলা গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে জিহাদকে প্রায় দুই বছর পর গত ১০ ফেব্রুয়ারি গাজীপুর থেকে আটক করেন।

সিরাজগঞ্জের পিবিআই প্রধান মো. রেজাউল করিম আদালতে আসামির স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে গতকাল প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, আবদুল মজিদ ও জিহাদ দুজন বন্ধু ছিলেন। আর আলপনা খাতুন ছিলেন জিহাদের প্রেমিকা। কিন্তু তাদের মধ্যকার সম্পর্কের বিষয়টি আবদুল মজিদ জানতেন না। আলপনাকে মজিদ বিয়ে করায় জিহাদ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে আলপনার সঙ্গে পরামর্শ করে মজিদকে হত্যার পর দুজন পালিয়ে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনামাফিক মজিদ বিয়ের পরদিন আলপনাদের বাড়িতে আসেন। রাত ২টার সময় আলপনা ঘরের বাইরে আসেন এবং জিহাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। স্ত্রী বাইরে যাওয়ায় মজিদও পেছন পেছন ঘরের বাইরে আসেন। ঘরের বাইরে আসামাত্র জিহাদ ও তার সহযোগী  মামুন, নয়ন, হাকিম ও ফিরোজ মুখ চেপে ধরে আবদুল মজিদকে মারধর করতে করতে নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে আবদুল মজিদ নিস্তেজ হয়ে পড়লে আসামিরা মৃত ভেবে হাটচৌবিলা গ্রামের একটি নির্জন বাঁশঝাড়ের মধ্যে রেখে খড়কুটা জ্বালিয়ে মজিদের শরীরে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। পরদিন মজিদকে জীবিত উদ্ধার করা হলে স্ত্রী আলপনা ভয়ে বিরূপ আচরণ করতে থাকে। এরপর গ্রামবাসী আলপনাকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। এসআই মো. রায়হান আলী শেখ মামলাটি তদন্তে সহায়তা করছেন পিবিআইর পুলিশ পরিদর্শক গোলাম কিবরিয়া।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর