সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বিশ্ববাসীর মন জয় করতে চায় খাদি-রসমালাই

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

বিশ্ববাসীর মন জয় করতে চায় খাদি-রসমালাই

কুমিল্লার খাদি পোশাক ও রসমালাইয়ের সুখ্যাতি দেশজুড়ে। সেই খাদি ও রসমালাই এবার বিশ্ববাসীর মন জয় করতে চায়, যেতে চায় বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে। বাঙালি ও বাংলাদেশির সঙ্গে বিদেশিদেরও মন জয় করতে চায়। এ জন্য প্রয়োজন বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের সহযোগিতা। কুমিল্লার ব্যবসায়ীরা সেই বাজারের অপেক্ষায় দিন গুনছেন।

খাদি ব্যবসায়ীরা জানান, খাদির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভারতবর্ষের স্বাধিকার আন্দোলন ও বাঙালি ঐতিহ্য। এ কাপড় খাদে (গর্তে) বসে তৈরি করা হয় বলে এর নাম দেওয়া হয় ‘খাদি’। শতবর্ষের ঐতিহ্যের খাদি আলোচনায় আসে ১৯২১ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময়। তখন মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে সমগ্র ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলনের সময় কুমিল্লায় খাদি শিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সেই সময় বিদেশি পণ্য বর্জন করার জন্য ডাক ওঠে। সর্বত্র এক আওয়াজ ‘মোটা কাপড়-মোটা ভাত’। সেই মোটা কাপড় এখন মিহি হয়েছে। কাপড়ে লেগেছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। কুমিল্লার খাদি এখন শৈল্পিকতার ছোঁয়ায় দেশ-বিদেশে সমাদৃত হয়ে আসছে। খাদির কাপড় বিচ্ছিন্নভাবে যাচ্ছে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে কুমিল্লা জেলায় দেড় হাজার পরিবার এই পেশায় জড়িত। মহানগরে খাদি কাপড়ের দোকান রয়েছে শতাধিক। খাদি কাপড় বিক্রির আলাদা মার্কেট হিলটন টাওয়ার রয়েছে নগরীর রাজবাড়ী এলাকায়।  আমেরিকা প্রবাসী জামাল হোসেন জানান, ‘তিনি দেশে এলে খাদির শার্ট, ফতুয়া পাঞ্জাবি ও থ্রিপিস ক্রয় করেন। স্বজনদের জন্যও কুমিল্লার ঐতিহ্যের খাদি কাপড় নিয়ে যান।’ শিক্ষাবিদ এহতেশাম হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘খাদি কুমিল্লার ঐতিহ্য। খাদির বর্ণিল ডিজাইনের কারণে দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। খাদির কাপড় উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

রসমালাই : এদিকে স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় কুমিল্লার রসমালাই। দেশে ব্যাপক চাহিদা কুমিল্লার রসমালাইয়ের। করোনার প্রভাব শুরু হওয়ার পূর্বে প্রতিদিন কমপক্ষে ২ টনের মতো রসমালাই বিক্রি হতো কুমিল্লার মিষ্টি প্রস্তুতকারী সমিতির অধীনস্ত ২২টি প্রতিষ্ঠানে। যার বাজার দর ৫ লাখ টাকার মতো। বছরে ১৮ কোটি ২৫ লাখ টাকার রসমালাই বিক্রি হতো এসব প্রতিষ্ঠানে। এদিকে মিষ্টি প্রস্তুতকারী সমিতির বাইরেও জেলার আরও অন্তত ৪০টি প্রতিষ্ঠান রসমালাই উৎপাদন করে।

ব্যবসায়ীদের সূত্রমতে, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯০০ সালে প্রথম কুমিল্লায় বাণিজ্যিকভাবে রসমালাই উৎপাদন শুরু হয়। কুমিল্লার মাতৃভাণ্ডার, ভগবতী পেড়া ভাণ্ডার ও শীতল ভাণ্ডার ১৯৩০ সাল থেকে রসমালাই বিক্রি করে আসছে। কুমিল্লা মিষ্টি ভাণ্ডার ১৯৫০ সালে রসমালাইয়ের ব্যবসা শুরু করে। বংশ পরম্পরায় চলছে রসমালাইয়ের ব্যবসা।

কুমিল্লা মিষ্টি ভাণ্ডারের ব্যবস্থাপক জালাল উদ্দিন আহমেদ জানান, ‘করোনার পূর্বে সারা দেশ থেকে মানুষ এসে এখানে রসমালাই ক্রয় করত। ভ্রমণে আসা অধিকাংশ পর্যটক কুমিল্লার রসমালাই নিয়ে যেত। ভারত থেকেও প্রচুর ক্রেতা আসত রসমালাই নিতে।’

কুমিল্লার শীতল ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী প্রবীর ঘোষ জানান, ‘৯০ বছর ধরে আমরা, ভগবতী পেড়া ভাণ্ডার ও মাতৃ ভাণ্ডার; এ তিনটি প্রতিষ্ঠান এখানে রসমালাইসহ বিভিন্ন মিষ্টান্ন তৈরি করছি।’

ভগবতী পেড়া ভাণ্ডারের স্বত্ত্বাধিকারী অ্যাডভোকেট কিরণময় দত্ত জানান, ‘কুমিল্লার রসমালাই বিদেশেও যাচ্ছে। গুণগত মান ঠিক রাখলে ৩৬ ঘণ্টা রসমালাই নষ্ট হয় না।’

কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আতিক উল্লাহ খোকন বলেন, ‘কুমিল্লার খাদি ও রসমালাইয়ের বিশ্ব বাজার ধরার মতো মান রয়েছে। এ জন্য সরকারের বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা ঘরে আসবে। বাড়বে কর্মসংস্থান।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর