শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

শিল্পের রাজধানী হবে চট্টগ্রাম

নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর, বঙ্গবন্ধু টানেল, আউটার রিং রোড, বে-টার্মিনাল, পতেঙ্গা টার্মিনাল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বড় বড় স্থাপনা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

শিল্পের রাজধানী হবে চট্টগ্রাম

ভৌগোলিক অবস্থান, বাণিজ্যিক-শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার দৃশ্যমান উন্নয়নের ফলে চট্টগ্রাম দেশের শিল্পের রাজধানী হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। তাছাড়া মিরসরাইয়ে প্রায় ৩১ হাজার একর আয়তনের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর গড়ে ওঠায় এ সম্ভাবনা আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী বাস্তবায়ন করার কথা বলা হলেও তা হয়নি। কিন্তু শিল্পনগর বলতে যা বোঝায় দেশে এখনো তা গড়ে ওঠেনি। তবে এখন চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর, বঙ্গবন্ধু টানেল, আউটার রিং রোড, বে-টার্মিনাল, পতেঙ্গা টার্মিনাল, চট্টগ্রাম-ঘুমধুম রেললাইন বাস্তবায়ন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ চট্টগ্রাম বিভাগে বড় পরিসরে সরকারি বড় বড় স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে। সঙ্গে বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান। সব মিলে চট্টগ্রাম শিল্পের রাজধানী হওয়ার সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে। এখন দরকার সরকারি উদ্যোগ। জানা যায়, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) দেশে ১০০টি  অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে। এর মধ্যে এশিয়ার বৃহত্তম হলো বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর। ২০১৮ সালের দিকে চট্টগ্রামের মিরসরাই, ফেনী ও সীতাকুন্ড এলাকায় প্রায় ৩১ হাজার একরে কেবল একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার চিন্তা  ছিল। পরে সেটি শিল্পনগর প্রতিষ্ঠায় রূপ নেয়। নাম দেওয়া হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিল্পনগর। আগামীতে যোগ হবে সন্দ্বীপের আরও প্রায় ১৩ হাজার একর জমি। ফলে এটি হবে পূর্ণাঙ্গ শিল্পনগর। এখানে থাকবে শিল্প-কারখানা, আবাসন, পর্যটন সুবিধা, বিনোদনসহ নানা সেবা। শিল্পনগরে এখন ভূমি উন্নয়নের সঙ্গে দেওয়া হয়েছে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ।  জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। কিন্তু এখন চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে সমৃদ্ধ ধারা শুরু হয়েছে, তাতে চট্টগ্রাম শিল্পের রাজধানী হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।’ চিটাগাং উইমেন চেম্বারের পরিচালক রোজিনা আকতার লিপি বলেন, ‘চট্টগ্রামে অর্থনৈতিক উন্নয়নে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। ফলে সমৃদ্ধ হচ্ছে জাতীয় অর্থনীতি। এসব উন্নয়নের কারণে শিল্পনগর হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। শিল্পনগর হলে ত্বরান্বিত হবে সমৃদ্ধ নগরের উন্নয়ন।’ তরুণ শিল্পোদ্যোক্তা ইশতিয়াক উর রহমান বলেন, ‘একটি নগরে শিল্পনগর বাস্তবায়ন হলে শিল্পবান্ধব অনেক অনুষঙ্গ তৈরি হবে। এর মাধ্যমে উপকৃত হবেন ব্যবসায়ীরা, সম্প্রসারণ হবে বাণিজ্য।’  জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের জন্য থাকবে পৃথক একটি বন্দর। এটি দিয়ে সহজেই চট্টগ্রাম বন্দর ও অন্যান্য বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়া করা যাবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরণি’ নামে চার লেনের একটি সড়ক। আগামীতে এটি উন্নীত হবে আট লেনে। শিল্পনগরকে সাগরের পানি থেকে সুরক্ষায় তৈরি হয়েছে উঁচু বাঁধ। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে সরকারি সংস্থার মধ্যে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেপজা) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫৫ একর জমি। ৫০০ একর জমিতে গার্মেন্টপল্লী করবে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমএই। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপসহ বড় বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলো জমি নিয়েছে শিল্পনগরে। ভারত বরাদ্দ নিয়েছে ১ হাজার একর জমি। এ জমিতে প্রতিষ্ঠা করা হবে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল। চীন, জাপান, যুক্তরাজ্য, ভারত, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা জমি পেতে আবেদন করেছেন। ইতিমধ্যে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়ে জমি নিয়েছে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি কোম্পানি। কেবল বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর নয়, চট্টগ্রাম বিভাগে যোগ হচ্ছে আরও উন্নয়নযজ্ঞ। কক্সবাজারের মহেশখালীতেও হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা। মহেশখালী উপজেলায় হবে একটি সমুদ্রবন্দর, ১৩ হাজার ৫৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চল, একটি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল, জ্বালানি তেলের পাইপলাইন ও পেট্রোলিয়াম কমপ্লেক্স। মহেশখালীতে হবে একাধিক অর্থনৈতিক অঞ্চল। ইতিমধ্যে একটিতে চলছে জমি বরাদ্দ। ফলে জ্বালানি ও ভারী শিল্পের কেন্দ্র হয়ে উঠছে এ দ্বীপ উপজেলাটি। পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হলে আগামীতে দেশের অর্থনীতির বড় অংশের কার্যক্রম চলবে চট্টগ্রাম বিভাগে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর