শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

রাজশাহীতে পদ্মা দখলের মচ্ছব

আবর্জনা ফেলে ভরাট শেষে নির্মাণ করা হচ্ছে স্থাপনা

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহীতে পদ্মা দখলের মচ্ছব

রাজশাহীতে কৌশলে দখল হচ্ছে পদ্মা নদী। দূষণের পাশাপাশি শুরু হয়েছে পদ্মার দখল। শহর রক্ষা বাঁধ দখল করে স্থাপন করা হচ্ছে নানা ধরনের স্থাপনা। পদ্মার শতাধিক স্থানে দখল নিতে চলছে ভরাটের কাজ। রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় বুলনপুর থেকে শ্যামপুর পর্যন্ত শহর রক্ষা বাঁধ দখল করে নানা স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া শহর রক্ষা বাঁধেও ভ্রাম্যমাণ অস্থায়ী স্থাপনাও বসানো হয়েছে। আবর্জনা ফেলে নদী তীর দখল করা হচ্ছে। এ ছাড়া পদ্মাতীর সংলগ্ন বাসিন্দারা বাসাবাড়ির আবর্জনা ফেলেও নদী তীর দখল করছে। দেখা গেছে, নগরীর শ্রীরামপুরে শহর রক্ষাবাঁধ ঘেঁষে পদ্মার ব্যাপক জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে সীমান্তে অবকাশ ও সীমান্তে নোঙর নামের দুটি বড় স্থাপনা। সেখানে রেস্টুরেন্টের ব্যবসা করা হয়। এ ছাড়া একটি স্থায়ী কনফারেন্স সেন্টারও গড়ে তোলা হয়েছে। পাঠানপাড়া শহর রক্ষাবাঁধ ঘেঁষে পদ্মা নদীর পাড়ে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে গড়ে তোলা হয়েছে লালন শাহ পার্ক। এ ছাড়া বড়কুঠি সংলগ্ন এলাকায় পদ্মার তীর ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে ২০-২৫টি অস্থায়ী দোকানপাট। শহর রক্ষাবাঁধের ওপর আছে অস্থায়ী দোকানপাট ও রাজনৈতিক দলের কয়েকটি ওয়ার্ড কার্যালয়। কুমারপাড়া পদ্মার পাড়ে প্রতিদিন সিটি করপোরেশনের ভ্যান থেকে ময়লা-আবর্জনা ফেলে পাড় দখল করা হচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু বলেন, ‘নদীতে সলিড কিংবা লিকুইড কোনো বর্জ্য ফেলা উচিত নয়। এটা আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ লিকুইড বর্জ্য পানিতে মিশে বায়োলজিক্যাল অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি করে। এর ফলে জলজ প্রাণী মারা যায়। আর ‘সলিড বর্জ্য ফেলা হলে কিংবা নদীর পাড়ে বা নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসতি গড়ে তোলা হলে তা নদীর পাড়কে দুর্বল করে দেয়। শহর রক্ষাবাঁধের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। রাজশাহীতে এমনিতে বাঁধের পাশে নদীসংলগ্ন এলাকায় বসতি আছে যা শহর রক্ষাবাঁধের জন্য হুমকি। এসব অবশ্যই সরিয়ে ফেলা উচিত।’ রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও নদীরক্ষা কমিশনের সদস্য জামাত খান বলেন, নদীর দখল বন্ধে তারা প্রতিটি সভাতেই আলোচনা করে আসছেন। কিন্তু বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। শক্ত পদক্ষেপ না নেওয়ায় অনেকে নদী দখলে উৎসাহী হচ্ছেন। সুশাসন বিশ্লেষক সুব্রত পাল বলেন, নদী রক্ষায় যেসব মন্ত্রণালয়ের কাজ করার কথা, তাদের কাজ করতে দেখা যাচ্ছে না বলেই পদ্মার আজ বেহাল অবস্থা। দখলের উৎসবে মেতেছেন প্রভাবশালীরা। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, ‘ব্রিটিশ আমলে যখন শহর রক্ষাবাঁধ তৈরি করা হয় তখন জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি। এ জন্য বাঁধের পাশের জমি খাস জমি হিসেবে পরিগণিত হয়। খাস জমির মালিক জেলা প্রশাসক। অনেকে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ইজারা নিয়েই তাদের স্থাপনা তৈরি করেছেন।’ তবে নদীর দখল বন্ধে তারা পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর