সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

শোরুমে বিক্রি হচ্ছে চোরাই ফোন

হাতিরপুলের বিভিন্ন নামিদামি শপিং মল থেকে ফোন ছড়িয়ে পড়ছে দেশজুড়ে

আলী আজম

শোরুমে বিক্রি হচ্ছে চোরাই ফোন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অন্তর্ভুক্ত সাত কলেজের একটির রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শক্তি প্রণয়। গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ সদরে। তার বাবা প্রশান্ত প্রণয় স্থানীয় চা দোকানি। নিজের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে ছেলেকে ঢাকায় পড়ালেখা করান। রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার একটি মেসে থাকেন শক্তি। দীর্ঘ দিনের মোবাইল ফোন সেটটি পুরনো হয়ে যাওয়ায় বাবার কাছে নতুন মোবাইল কেনার বায়না ধরেন। ছেলের আবদার ফেলতে পারেননি বাবা। ধারদেনা করে ১৫ হাজার টাকা পাঠান ছেলেকে। টাকা পাওয়ার পর এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ফার্মগেটের একটি শোরুম থেকে শাওমি ব্র্যান্ডের একটি মোবাইল সেট কেনেন শক্তি। সবকিছু ঠিকই চলছিল।

কিন্তু ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি ফোন কল তাকে অবাক করে দেয়। প্রথমে বিশ্বাস না হলেও একপর্যায়ে বুঝতে পারেন, বাবার কষ্টার্জিত ধারদেনায় কেনা ফোনটি মূলত একটি চোরাই ফোন। পরে ফোনটি ডিবি অফিসে জমা দিতে বাধ্য হন শক্তি। শুধু শক্তিই নয়, শোরুম থেকে যথাযথ উপায়ে ফোন কিনে প্রতারিত হচ্ছেন অনেকেই। এমনকি শোরুমের মালিকরাও বুঝতে পারছেন না পাইকারি দামে চোরাই ফোন কিনে আনছেন তারা।

মোবাইল ফোন বিক্রির জন্য জনপ্রিয় রাজধানীর হাতিরপুলের মোতালিব প্লাজাসহ বিভিন্ন নামিদামি শপিং মল থেকে এরকম চোরাই ফোন ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। মূলত মোবাইল ফোন চোরচক্র বিভিন্ন মোবাইল শোরুম থেকে চুরি করে সেটগুলো বিক্রি করে দিচ্ছে মোতালিব প্লাজাসহ বিভিন্ন শপিং মলের পাইকারি দোকানে। পরে সেখান থেকে ফোন কিনে প্রতারিত হচ্ছেন শোরুম মালিকরা। আর শোরুম থেকে যথাযথ উপায়ে কিনে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মালিবাগের হোসাফ টাওয়ারের সামনে থেকে মোবাইল চোরচক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে ডিবির মতিঝিল বিভাগ। তারা হলো- মো. সোহেল, মো. আনোয়ার হোসেন ও মো. সাইদুল ইসলাম ওরফে সবুজ। এ সময় তাদের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা মূল্যের অপপো, শাওমি, আইটেল, ভিভো ও রেডমি ব্র্যান্ডের ১১টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। পরে এ বিষয়ে রমনা থানায় একটি মামলা (নম্বর-২৩) করা হয়। ডিবি সূত্র জানায়, চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শোভন ইলেকট্রনিক্সের মালিক মো. আসাদুর রহমান শোভন ডিবি অফিসে যোগাযোগ করেন। পরে ফোনগুলোর আইএমইআই মিলিয়ে দেখেন, তার দোকান থেকে গত ৭ জানুয়ারি ভোরে চুরি হওয়া ৩৫টি ফোনের ১১টিই ডিবি উদ্ধার করেছে। শোভন বলেন, তার দোকানের তালা ভেঙে ফোনগুলো একজন চুরি করে। এ ঘটনায় তিনি ঘাটাইল থানায় একটি জিডি করেন। পরে গ্রেফতারের খবর পেয়ে চুরির ওই ঘটনার সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেন ডিবি পুলিশকে। সিসি ক্যামেরা ফুটেজের ওই চোরের নাম হাসমত আলী ওরফে আবুল হাসনাত। ডিবির ধারণা, হাসমতের কাছ থেকেই ফোনগুলো সংগ্রহ করে বিভিন্ন শপিং মলে ছড়িয়ে দিত গ্রেফতারকৃতরা।

ডিবির মতিঝিল বিভাগের এসি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, গ্রেফতারকৃতদের কাছে তথ্য পেয়ে হাসমতকে গ্রেফতারে নবীনগর এলাকায় অভিযান চালানো হয়। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সে পালিয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, সে আন্তজেলা মোটরসাইকেল চোর চক্রের সদস্য। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। পাশাপাশি এ ধরনের আরও চক্র সক্রিয় রয়েছে কিনা সে বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে।

ডিবি কর্মকর্তা মামুন আরও বলেন, যে দোকান থেকে মোবাইল সেট কেনা হবে অবশ্যই ওই দোকানের রিসিট নিতে হবে। রিসিটে সুনির্দিষ্ট দিন তারিখ ও আইএমইআই উল্লেখ থাকতে হবে। বিক্রেতার স্পষ্ট স্বাক্ষর থাকতে হবে। রিসিটে ফোন সেটের ব্র্যান্ড, মডেল ও রঙ উল্লেখ থাকতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর