বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

২৪ মাসে দ্বিগুণ লাভের আশ্বাসে প্রতারণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রিয়েল এস্টেট ব্যবসার নামে গ্রাহকদের ২৪ মাসে দ্বিগুণ লাভের প্রলোভন দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে নয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের খপ্পরে পড়ে অন্তত ছয় শতাধিক গ্রাহক কোটি কোটি টাকা খুইয়েছেন। গ্রেফতার ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার নামে বিভিন্ন লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিত। এভাবে গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। গ্রাহকদের টাকা নিয়ে ঠিকানা পরিবর্তন করে বিভিন্ন স্থানে নতুন অফিস খুলে আবারও প্রতারণা করত তারা। গতকাল বেলা ১২টায় রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিরা পরস্পর যোগসাজশে গত দেড় বছর ধরে আবাসিক এলাকায় রিয়েল এস্টেট ব্যবসার নামে বিভিন্ন লোভনীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে গ্রাহকদের অধিক মুনাফা দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসছে। ছয় শতাধিক ভুক্তভোগীর তথ্য আমরা পেয়েছি।

তাতে প্রায় ৭ কোটির বেশি টাকা আত্মসাতের তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্তে প্রতারিতের সংখ্যা ও আত্মসাৎ করা টাকার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। প্রতারক চক্রটি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ও অনলাইনে লোভনীয় বিজ্ঞাপন প্রচার করে। অনেকেই লোভে পড়ে বিনিয়োগ করেন। বিনিয়োগের আগে কেউ অভিযোগ করেননি। প্রতারণার শিকার হওয়ার পর সিআইডিতে শতাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন।

তাদের প্রতারণার শিকার হয়েছেন আইয়ুব হোসাইন নামে অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা সদস্যও। তিনি ২০১৪ সালে ল্যান্স করপোরাল পদ থেকে অবসরে যান। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়। পেনশনের টাকায় শুরু করেন ব্যবসা। কিন্তু সে ব্যবসায় লোকসানে পড়ে যান। এরপর অংশীদারি ভিত্তিতে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় দ্বিগুণ লাভের প্রস্তাব পান তিনি। লাখে ৬ হাজার ৩০০ টাকা দেওয়ার প্রস্তাবে এসএস আবাসন নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ৪ লাখ টাকা লগ্নি করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি লাভের ২৫ হাজার ২০০ টাকা তুলতে গিয়ে জানতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনের পর সিআইডি কার্যালয়ে তিনি বলেন, ভেবেছিলাম এখানে প্রতারণার সুযোগ নেই। কিন্তু গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এসএস আবাসনের নতুন অফিসে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি সিআইডি পুলিশ। অফিসের অন্যদের সঙ্গে আমাকেও আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আমি সব বলি। সিআইডি জানায়, এরা সবাই প্রতারক। এখন আমি টাকা ফেরত পাব কিনা জানি না। একটি টাকাও লাভ পাইনি। এখন আসল ফেরত পাব কিনা তাও জানি না।

শুধু আইয়ুব আলী নয়, এমন ছয় শতাধিক ভুক্তভোগীর একেকজনের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ১৩ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে আত্মসাৎ করেছে এসএস আবাসন নামে ওই প্রতিষ্ঠান। ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে এ প্রতিষ্ঠানের নয়জনকে গ্রেফতারের পর রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় গতকাল একটি মামলা হয়েছে।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- আল আমিন, মো. মামুন, মো. মোজাম্মেল হোসেন, সাইফুল ইসলাম, আবদুল হালিম, জাহাঙ্গীর আলম, শাহাদাত হোসেন সুমন ও আমিনুল ইসলাম। তবে প্রতিষ্ঠানটির হোতা রাশেদুর রহমান পলাতক রয়েছেন।

গ্রেফতার অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে প্লট কিংবা ফ্ল্যাট বুকিং আবেদন ফরম ৫০টি, এসএস আবাসনের লেনদেন সংক্রান্ত রেজিস্টার সাতটি, এসএস আবাসনের অর্থ বিনিয়োগ চুক্তিপত্র ১০০ টাকা সমমানের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ১২টি, আবেদন ফরম ৩৫টি, লেনদেন সংক্রান্ত খাতা ১৭টি, ডেবিট ভাউচার দুটি, মানি রিসিট ছয়টি, এসএস আবাসনের কমিশন শিট ছয় পাতা এবং নগদ ১৪ লাখ টাকা জব্দ করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর