শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

একাই ৬৯ পরিদর্শন কমিটির আহ্বায়ক ডা. জাওয়াদুল

রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহীর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) কলেজ পরিদর্শক ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ সব মিলিয়ে অন্তত সাতটি পদে আছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ডা. জাওয়াদুল হক। এত কিছুর পরেও বিধি লঙ্ঘন করে এবার তার বিরুদ্ধে ৬৯টি পরিদর্শন কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে সম্মানী নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অথচ নিয়ম অনুযায়ী তিনি এক বছরে সর্বোচ্চ চারটি পরিদর্শন কমিটির আহ্বায়ক হতে পারবেন। কিন্তু সেই নিয়মকে উপেক্ষা করে উপাচার্যের (ভিসি) প্রশ্রয়ে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক নানা কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। রামেবি সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের এই শিক্ষক সম্প্রতি আরও দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। এই পরিচয়কে পুঁজি করেই তিনি রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (রামেবি) অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছেন। উপাচার্য অধ্যাপক মাসুম হাবিবের ঘনিষ্ঠ হিসেবে রামেবির সব কাজেই নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় তিনি। তবে অধ্যাপক ডা. জাওয়াদুল হক বলেন, ‘সাতটি পদের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি সঠিক নয়। ডিনের একটি আমার মূল পদ। বাকিগুলোর অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। ভাইস চ্যান্সেলর আমাকে যোগ্য মনে করেই দায়িত্বগুলো দিয়েছেন, তাই আমি তা পালন করছি। কলেজ পরিদর্শক প্রত্যেকটি কমিটির সদস্যসচিব থাকতে পারেন।’ সূত্র জানায়, সরকারি-বেসরকারি মিলে ৫৮টি মেডিকেল প্রতিষ্ঠান রামেবির অধিভুক্ত। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিভুক্তি নবায়ন ও পরীক্ষা কেন্দ্র প্রদানে প্রতি শিক্ষাবর্ষে পরিদর্শন কমিটি গঠিত হয়। রামেবির নিজস্ব সংবিধি না থাকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সংবিধি অনুযায়ী অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও পরীক্ষা গ্রহণসহ সব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ওই সংবিধি অনুযায়ী কলেজ পরিদর্শক বা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের প্রাথমিক অধিভুক্তি, অধিভুক্তি নবায়ন বা কেন্দ্র প্রদান সংক্রান্ত কোনো পরিদর্শন কমিটিতে আহ্বায়ক হওয়ার সুযোগ নেই। তবে কলেজ পরিদর্শক সদস্যসচিব হিসেবে একটি শিক্ষাবর্ষে সর্বোচ্চ দুটি কলেজ পরিদর্শন বাবদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানী গ্রহণ করতে পারেন। আর অধ্যাপক পদমর্যাদার একজন চিকিৎসক আহ্বায়ক বা সদস্য যে দায়িত্বেই থাকেন না কেন, একটি শিক্ষাবর্ষে সর্বোচ্চ ৪টি কলেজ পরিদর্শনে যেতে পারবেন। কিন্তু ডা. জাওয়াদুল হক ওই বিধির তোয়াক্কা না করে ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষেই রামেবির ৬৯টি পরিদর্শন কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন।

রামেবির একাধিক সূত্র জানায়, ভিসি অধ্যাপক ডা. মাসুম হাবিব ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি অফিস করতে পারেন না। বাসা থেকে কোনো মতে কিছু ফাইলপত্রে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু দাফতরিক বিষয়ে ডা. জাওয়াদুল হক ছাড়া অন্য কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ নেই। তাই ডা. জাওয়াদুল হকের মাধ্যমেই দাফতরিক সব ফাইলপত্র উপাচার্যের কাছে যাচ্ছে। এ সুযোগে ডা. জাওয়াদুল হক কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিজের খেয়ালখুশি মতো দাফতরিক কাজকর্ম চালাচ্ছেন।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) রাজশাহী জেলার সভাপতি অধ্যাপক ডা. চিন্ময় কান্তি দাস বলেন, রামেবি অধিভুক্ত মেডিকেল কলেজগুলোতে স্বাচিপ সমর্থিত অধ্যাপক আছেন। তাদের সরাসরি উপেক্ষা ও পাশ কাটিয়ে চলছেন রামেবি ভিসি। শুধু তাই নয়, আত্মীয়-স্বজনকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে ভিসি রামেবিতে স্বাধীনতাবিরোধী বলয় গড়ে তুলেছেন।

বিএমএ রাজশাহী শাখার সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নওশাদ আলী বলেন, ‘রামেবির আটজন ডিনের কাউকেই ভিসি যোগ্য মনে করেন না। অজ্ঞাত কারণে ওই একজনকে দিয়ে ভিসি রামেবির নিয়োগ, বাছাই, পরীক্ষা, সব পরিদর্শন, সব সিলেকশন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ, কলেজ পরিদর্শক, কেন্দ্র প্রধান, অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান অ্যাফেলিয়েশনসহ সব কর্মকান্ড করাচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, রামেবি আইনে আছে, সিন্ডিকেটের অনুমোদনসাপেক্ষে কাউকে শুধুমাত্র ছয় মাসের জন্য অস্থায়ী নিয়োগ দিতে পারবেন উপাচার্য। কিন্তু এ পর্যন্ত রামেবিতে যত নিয়োগ হয়েছে, তার কোনোটিতেই সিন্ডিকেটের পূর্বানুমোদন নেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ স্বাচিপ সভাপতি ডা. অধ্যাপক খলিলুর রহমান বলেন, ‘তিনি (ডা. জাওয়াদুল হক) একাধিক পদে আছেন কি না জানি না। তবে এটা অগণতান্ত্রিক। তিনি কি একাই দায়িত্ব পালন করবেন নাকি? আর কেউ যোগ্য নেই। আমি এটার তীব্র বিরোধিতা করি।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর