শিরোনাম
সোমবার, ১ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

বেনাপোল বন্দরে অসম বাণিজ্য

আমদানির চার ভাগের এক ভাগ রপ্তানি

বেনাপোল প্রতিনিধি

বেনাপোল বন্দরে অসম বাণিজ্য

দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোল। বন্দরটি দিয়ে পণ্য আমদানি বেশি হয়। আর রপ্তানি হয় আমদানির ৪ ভাগের ১ ভাগ। বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত পাঁচ বছরে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৮৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮১১ মেট্রিক টন পণ্য। এ সময় বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়েছে ১৮ লাখ ৭২ হাজার ২১০ টন। বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি হয় ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৯৩৮ টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য। এ সময় ভারতে রপ্তানি হয় ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৭৩৯ টন পণ্য। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমদানি হয় ১৩ লাখ ৯৩ হাজার ৩২৯ টন; রপ্তানি হয় ৩ লাখ ২৫ হাজার ৩৮১ টন পণ্য। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি হয় ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৩৫৯ টন; রপ্তানি হয় ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৬৩ টন পণ্য। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি হয় ২১ লাখ ৮১ হাজার ১২৩ টন; রপ্তানি হয় ১৭ লাখ ১ হাজার ১১৭ টন পণ্য। ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি হয় ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪ টন; রপ্তানি হয় ৩ লাখ ১৬ হাজার ৯৫০ টন। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর- ছয় মাসে আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ৫ হাজার ১১৩ টন। এ সময় রপ্তানি হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৫ টন পণ্য। বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পণ্যের মধ্যে রয়েছে শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল, তৈরি পোশাক, কেমিক্যাল, মেশিনারিজ যন্ত্রাংশ, সুতা ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাতপণ্য, মাছ, মেলামাইন, তৈরি পোশাক ও টিস্যু উল্লেখযোগ্য।

বর্তমানে বেনাপোল বন্দরের স্থল ও রেলপথে ভারতের সঙ্গে বহু ধরনের পণ্যের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য চলছে। প্রতি বছর এ পথে ভারত থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি ও ১০ হাজার কোটি টাকা পণ্য সেদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। আমদানি করা পণ্য থেকে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়ে থাকে। ইন্দো-বাংলা চেম্বার অব কমার্স সাব-কমিটির পরিচালক মতিয়ার রহমান বলছেন, দেশের স্থলপথে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয় তার ৭৫ শতাংশ হয়ে থাকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন অবহেলায় এ পথে বাণিজ্যে আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এতে ব্যবসায়ীরা যেমন লোকসানের শিকার হচ্ছেন তেমনি সরকারও হারাচ্ছে কাক্সিক্ষত রাজস্ব। বন্দরকে নৌ-মন্ত্রণালয়ের অধীন থেকে সরিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে নেওয়া হলে দ্রুত অবকাঠামো উন্নয়ন সম্ভব বলে অভিমত দেন তিনি। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, কেবল অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে এ পথে বাণিজ্যের প্রসার হচ্ছে না। আজও বাস্তবায়ন হয়নি ভারত-বাংলাদেশ- নেপাল-ভুটান (বিবিআইএন) চার দেশীয় বাণিজ্যিক কার্যক্রম। বেনাপোল বন্দরের অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ীদেরও। তাদের মতে, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন হলে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ তেমন কঠিন কিছু নয়। বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার জানান, ইতিমধ্যে বেনাপোল বন্দর সম্প্রসারণে নতুন কিছু জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কয়েকটি আধুনিক পণ্যাগার নির্মাণ হয়েছে।

সিসি ক্যামেরার জন্য বাজেট হয়েছে। এ ছাড়া আমদানি করা পণ্যের নিরাপত্তায় বন্দরের চারপাশ দিয়ে উঁচু প্রাচীর নির্মাণ এবং আরও জায়গা অধিগ্রহণের পরিকল্পনা বন্দরের রয়েছে। এসব বাস্তবায়ন হলে বাণিজ্য প্রসারে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধা বাড়ানোর পক্ষে। ইতিমধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবকাঠামো সুবিধা বৃদ্ধির জন্য চিঠি দিয়েছি। বন্দরের সক্ষমতা বাড়লে বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে বাড়বে সরকারের রাজস্ব আহরণ।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর