বুধবার, ৩ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় চট্টগ্রাম

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় চট্টগ্রাম

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করে। দেশের অর্থনৈতিক এ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় চট্টগ্রামের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, অবকাঠামোগত ও যোগাযোগ খাতের উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও গবেষণায় অগ্রগতিসহ নানা খাতে চট্টগ্রামের অবদান রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তা ছাড়া আগামীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরী, বঙ্গবন্ধু টানেল, আউটার রিং রোড, বে-টার্মিনাল, পতেঙ্গা টার্মিনাল, চট্টগ্রাম-ঘুমধুম রেললাইন ও অ্যালিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়ন হলে আরও ত্বরান্বিত হবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। ফলে দেশের সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় চট্টগ্রামও অনন্য সারথি বলে জানিয়েছেন তারা। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার গতি অব্যাহত রাখতে হলে সুষম উন্নয়ন অপরিহার্য। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, নাগরিক সুবিধা ও যোগাযোগব্যবস্থায়ও সমন্বিত উন্নয়ন দরকার। জানা যায়, ভৌগোলিক কারণে চট্টগ্রামের অবস্থান এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান অনন্য। চট্টগ্রাম এশিয়ার সপ্তম এবং বিশ্বের দশম দ্রুততম ক্রমবর্ধমান শহর। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯৩ শতাংশ পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। সমুদ্রপথে কনটেইনারে পণ্য আমদানি-রপ্তানির ৯৮ শতাংশ হয় এ বন্দর দিয়ে। দেশের ৬৫ শতাংশ রাজস্ব আহরিত হয় চট্টগ্রাম বন্দর-কাস্টমসের মাধ্যমে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে মিরসরাইয়ে প্রায় ৩১ হাজার একর জমিতে নির্মিত হচ্ছে উপমহাদেশের বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী। আনোয়ারায় হচ্ছে দুটি চীনা অর্থনৈতিক জোন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ নূর নবী বলেন, দেশ উন্নয়নশীল হওয়ার ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে চট্টগ্রামের গুরুত্ব অনেক। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী : ২০১৪ সালের নভেম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরী তথা দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নকাজ শুরু করে বেজা। প্রায় ৩১ হাজার একর ভূমিতে হচ্ছে শিল্পনগরীটি। এখানে ১০০ একর ভূমিতে হচ্ছে নয়নাভিরাম ‘শেখ হাসিনা সরোবর’। থাকবে নান্দনিক পর্যটন কেন্দ্র, দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা। ১১২ একরে নির্মিত হবে আন্তর্জাতিক মানের পাঁচ তারকা হোটেল ও রিসোর্ট। ৫০০ একর ভূমিতে হবে গার্মেন্ট পল্লী। হবে ২৫টি আলাদা জোন। মাটি ভরাট করে তৈরি করা হচ্ছে শিল্প প্লট। নির্মিত হচ্ছে ছোট-বড় নানা অবকাঠামো, বিস্তৃত পিচঢালা পথ, ভাঙন-প্রতিরোধী বেড়িবাঁধ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল : ১ হাজর ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)। ইতিমধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৭৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে কাজ শুরু হওয়া প্রকল্পটি আগামী জুনে চালুর কথা। এটি চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির বড় প্রকল্প। ৩২ একর ভূমিতে নির্মাণাধীন পিসিটি চালু হলে বছরে ৪ লক্ষাধিক টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা যাবে। বে-টার্মিনাল : বে-টার্মিনালকে বলা হচ্ছে ‘আজ এবং আগামীর বন্দর’। আমদানি-রপ্তানি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে পতেঙ্গা-হালিশহরের সাগর উপকূলে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বে-টার্মিনাল নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। সাগর উপকূলের ৮৭১ একর ব্যক্তিমালিকানাধীন ও সরকারি জমি ছাড়াও সমুদ্র থেকে জেগে ওঠা আরও ১ হাজার ৬০০ একরসহ ২ হাজার ৫০০ একর জমিতে টার্মিনালটি নির্মাণের কথা। ইতিমধ্যে ব্যক্তিমালিকানাধীন ৬৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয় এবং ৮০৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর