শনিবার, ৬ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

ডিজিটাল নকশায় হবে নতুন গ্যাসলাইন

এখন রয়েছে ২০ বছরের পুরনো লাইন ♦ এক বছরে দুর্ঘটনা ৩০৬টি

জিন্নাতুন নূর

ডিজিটাল নকশায় হবে নতুন গ্যাসলাইন

রাজধানী ঢাকায় এখন যে গ্যাস পাইপলাইন নেটওয়ার্ক আছে তা এক-একটি ‘টিকিং টাইম বোমা’। যে কোনো মুহূর্তে এ বোমা বিস্ফোরিত হয়ে ঘটতে পারে বড় রকমের দুর্ঘটনা। কারণ ঢাকার লাইনগুলো ১৫ থেকে ২০ বছরের পুরনো। এগুলো থেকে গ্যাস লিক হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে। এ অবস্থায় সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় পুরনো গ্যাসলাইন বদলে নতুন পাইপলাইন স্থাপনের উদ্যোগ নিচ্ছে। এতে যে নকশা করা হবে তা হবে ডিজিটালাইজড। সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই বড় এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানী ও আশপাশে যে অগ্নিদুর্ঘটনাগুলো ঘটছে তার প্রায় ৩০ শতাংশই গ্যাস সৃষ্ট আগুনের জন্য ঘটছে। গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের তল্লায় গ্যাস লিকেজ থেকে সৃষ্ট দুর্ঘটনায় ২৪ জন মানুষ প্রাণ হারান। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ সালে গ্যাস লিকেজের ঘটনা ঘটে ৪ হাজার ৪৯৬টি। আর একই বছর এ কারণে অগ্নিদুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে ৩০৬টি। রাজধানীর যে লাইন দিয়ে ৫০ জন গ্রাহকের লাইনে গ্যাস আসার কথা, সে লাইন দিয়ে ৫০০ গ্রাহককে গ্যাস দেওয়া হয়। ফলে সেই লাইনে চাপ বেড়ে যাচ্ছে। আবার পাইপলাইনগুলো দুর্বল হওয়ার কারণে প্রেসার নেওয়ার ক্ষমতাও দিন দিন কমে যাচ্ছে। এই পাইপলাইনগুলোতে জং ধরছে এবং যে লাইনগুলো খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে- তা থেকেও গ্যাস লিক হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা শহরে যে গ্যাস পাইপলাইন নেটওয়ার্ক আছে তা একটি টিকিং টাইম বোমা। এখানে কত জায়গায় যে লিকেজ আছে তা কেউ জানে না। আমাদের এখানে যখন একটি দুর্ঘটনা ঘটে তখন সবাই হুমড়ি খেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ লাইন মেরামত করে। কিন্তু এতে কোনো লাভ নেই। এ ধরনের অসংখ্য অবৈধ লাইন আছে- যে স্থানে ছোট-বড় লিকেজ হচ্ছে। এ জন্য এ থেকে সৃষ্ট দুর্ঘটনা রোধে সরকার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকে একটি মাস্টারপ্ল্যান গ্রহণ করতে হবে। এর আওতায় পুরো পাইপলাইনটিকে সার্ভে করে অবৈধ সংযোগের মতো বিপজ্জনক পয়েন্ট চিহ্নিত করে তা উচ্ছেদ করা এবং পুরনো লাইনগুলোও একই সঙ্গে পরিবর্তন করতে হবে। আর এমনটি করা না গেলে কেউই বিপদমুক্ত হতে পারবে না। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের সব পুরনো লাইন উঠিয়ে অটোমেশন করে সব লাইন অটোমেটেড করা হবে। নতুন করে ডিজিটাল ডিজাইন হবে। এখানে প্রি-পেইড মিটার লাগানো হবে। এটা খুব বড় প্রকল্প। ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফেসিলিয়েশন কোম্পানি (আইআইএফসি)-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এর ফিজিবিলিটি স্টাডি ও ডিজাইন করার জন্য। এরপর কেরানীগঞ্জ, সাভার ও গাজীপুরে একইভাবে লাইন অটোমেটেড করা হবে। কারণ যত্রতত্র পাইপ বসানো হয়েছে। নকশার সঙ্গে কোনো মিল নেই। সেই পাইপ থেকে অনেকে লাইন নিয়েছে। এগুলো শেষ করা দরকার। আগামী চার বছরের মধ্যে এর কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি। অর্থাৎ আগামী নির্বাচনের আগে এই কাজ ধরব বলে আমরা আশাবাদী। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মো. নুরুল্লাহও বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ঢাকায় গ্যাসের নতুন পাইপলাইন প্রতিস্থাপনে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি একটি বৃহৎ প্রকল্প। এতে গ্যাস সংকটেরও কিছুটা উন্নতি হবে।

সর্বশেষ খবর