বুধবার, ১০ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে ৫০ বছরেও হয়নি স্মৃতিসৌধ

শহীদ মিনারেই শ্রদ্ধা জানানো হয় মুক্তিযোদ্ধাদেরও

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

দেশের স্বাধিকার আন্দোলনের প্রথম বীজমন্ত্র ঐতিহাসিক ছয় দফা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দান থেকে ঘোষণা করেন। আর কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকেই বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রামে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতিচিহ্ন। বলা হয় চট্টগ্রাম স্বাধীনতা আন্দোলনের সূতিকাগার। অথচ স্বাধীনতার পাঁচ দশকেও চট্টগ্রাম মহানগরে তৈরি হয়নি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্মারক স্মৃতিসৌধ। শহীদ মিনার ভাষাশহীদদের স্মৃতির স্মারক হলেও চট্টগ্রামে ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বরসহ সব দিবসে স্মরণীয়-বরণীয়দের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর ‘সবেধন নীলমণি’ শহীদ মিনার। মহানগরের মুসলিম ইনস্টিটিউট হলের সামনে অবস্থিত এ শহীদ মিনার। তবে চট্টগ্রামের পটিয়ায় ও রাউজান উপজেলায় দুটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা চট্টগ্রামে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কথা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঘোষণা দিয়েছেন। ২০১৯ সালের ১৯ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ‘সরকার মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে’ বলে জানিয়েছিলেন। তা ছাড়া চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন পুরনো সার্কিট হাউসের সামনে শিশু পার্কের জায়গাটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্মৃতিসৌধ নির্মাণের উপযুক্ত বলে বিভিন্ন সময় বলেছেন। তবে এ নিয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে জানা যায়। মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ ফাহিম উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা ঘোষণা, কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ এবং ’৭১ সালের ২২-২৩ মার্চ পাকিস্তান থেকে আসা সোয়াত জাহাজে করে আনা অস্ত্র খালাস ঠেকানোসহ নানা ঘটনার সাক্ষী চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম স্বাধীনতা আন্দোলনের সূতিকগার। এটি কেবল কথায় নয়, বাস্তবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও চট্টগ্রামে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ হয়নি। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এটি লজ্জার। চট্টগ্রামে এমন কোনো স্মৃতিস্মারক নেই যা দেখে বর্তমান প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করা যাবে। আমি মনে করি এটি রাজনৈতিক ব্যর্থতা এবং উদ্যোগের অভাব।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর আগে চট্টগ্রামে স্মৃতিসৌধ নির্মাণসহ ১১ দফা দাবি নিয়ে সিটি মেয়রকে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। তার আগেও বিভিন্নভাবে দাবি করেছি। দায়িত্বশীলরাও এ নিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু বাস্তবে কোনো কাজ হয়নি।’ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী সুমন তালুকদার বলেন, ‘চট্টগ্রামে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। তা ছাড়া পটিয়া উপজেলায় একটি ও রাউজানে দুটি স্মৃতিস্তম্ভ আছে। তবে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কোনো প্রকল্প আপাতত নেই। আগামীতে এ নিয়ে পরিকল্পনা নেওয়া হবে।’ জানা যায়, ১৯৬৯ সালে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নন্দনকানন মুসলিম ইনস্টিটিউট হলের সামনে নির্মাণ করা হয় শহীদ মিনার। প্রথম দিকে মাতৃভাষা উপলক্ষে শহীদ মিনারটি ব্যবহৃত হতো। কিন্তু চট্টগ্রামে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর বিকল্প মাধ্যম না থাকায় পর্যায়ক্রমে জাতীয় সব দিবসে শ্রদ্ধা জানানোর প্রধান আঙিনা হয়ে ওঠে শহীদ মিনার। তবে প্রতি বছর স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবির কথা বলা হলেও কার্যত এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর