শুক্রবার, ১২ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

সিলেটে ফের উৎপাদন হবে জ্বালানি তেল

সচল হচ্ছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শোধনাগার

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পর সিলেটে ফের জ্বালানি তেল উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে সিলেটস্থ রাষ্ট্রীয় শোধনাগারেই হবে জ্বালানি তেল উৎপাদন। এ লক্ষ্যে শোধনাগারগুলো সংস্কার ও মানোন্নয়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক। জ্বালানি তেল সংকট নিরসনের লক্ষ্যে সিলেট সফরে এসে তিনি একথা জানিয়েছেন।  সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিলেটের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাসের সঙ্গে উপজাত হিসেবে প্রচুর পরিমাণে কনডেনসেট পাওয়া যায়। সিলেটের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৬টি শোধনাগারে পরিশোধন করে এই কনডেনসেট থেকে পেট্রোল, ডিজেল ও অকটেন উৎপাদন করা হতো। এর মধ্যে প্রতিদিন গোলাপগঞ্জের রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল) এর দুটি প্লান্ট থেকে ৮০০ ও ৫০০ ব্যারেল, সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের আওতাধীন হরিপুরে ৬০ ব্যারেল, কৈলাসটিলায় ৩০০ ব্যারেল এবং রশিদপুরের দুটি প্লান্টে যথাক্রমে ৩৭৫০ ও ৪০০০ ব্যারেল পেট্রোল, ডিজেল ও এলপিজি উৎপাদন হতো। কিন্তু বিএসটিআইর মানসম্পন্ন জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না- এমন অজুহাতে বন্ধ করে দেওয়া হয় সবকটি শোধনাগার।

 এরপর থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদনের জন্য সিলেট থেকে কনডেনসেট পাঠিয়ে দেওয়া হয় চট্টগ্রামস্থ বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। সিলেটে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে এই অঞ্চলে দেখা দেয় জ্বালানি সংকট। চট্টগ্রাম থেকে রেলের ওয়াগনে করে তেল সরবরাহ করে সিলেটের চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছিল না। ওয়াগন সংকট ও তেলবাহী ট্রেনের ঘন ঘন দুর্ঘটনার কারণে ব্যাহত হয় তেল পরিবহন। এতে সিলেটে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট দেখা দেয়।

জ্বালানি ব্যবসায়ীরা জানান, শুষ্ক মৌসুমে সিলেট বিভাগের ১১৪টি পাম্পে পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল ও কেরোসিনের প্রতিদিনের চাহিদা ১০ লাখ লিটারেরও বেশি। তবে বর্ষা মৌসুমে এই চাহিদা অর্ধেকে নেমে আসে। গত দুই মাস ধরে চাহিদার অর্ধেক জ্বালানি তেলও পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন স্থান  থেকে তেল এনে পাম্পগুলো সচল রাখতে হচ্ছে। এই অবস্থায় চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি তেল সরবরাহের দাবিতে আগামী ১৪ মার্চ থেকে সিলেট বিভাগে ধর্মঘটের ডাক দেন জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা। ধর্মঘট আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার সিলেট সফরে আসেন বিপিসির চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসন ও জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি সিলেটের শোধনাগারগুলো সংস্কার করে ফের চালুর আশ্বাস দেন। এ ছাড়া সংকট নিরসনে রেলপথের পাশাপাশি নদীপথেও জ্বালানি তেল পরিবহনের আশ্বাস দেন তিনি।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটরস, এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমদ চৌধুরী জানান, বিপিসির চেয়ারম্যানের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে তারা ধর্মঘট স্থগিত করেছেন। তিনি বলেন, বিএসটিআইর নির্ধারিত মানসম্পন্ন জ্বালানি তেল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না এমন অজুহাতে সিলেটস্থ রাষ্ট্রীয় শোধনাগারগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ চট্টগ্রামের বেসরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হচ্ছে তার মান আরও খারাপ।

নিম্নমানের জ্বালানি তেল বিক্রির অভিযোগে এরই মধ্যে সিলেটের কয়েকটি পাম্পকে ভোক্তা অধিকার অধিদফতর ও বিএসটিআই জরিমানা করেছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের ষড়যন্ত্র থেকেই সিলেটের শোধনাগারগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।  শেষ পর্যন্ত বিপিসি ফের শোধনাগার চালুর আশ্বাস দেওয়ায় তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর