শনিবার, ১৩ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

যে কোনো সময় গ্রেফতার পি কের বান্ধবী নাহিদা

নিজস্ব প্রতিবেদক

যে কোনো সময় গ্রেফতার হচ্ছেন বর্তমান সময়ে মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনায় বহুল আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী নাহিদা রুনাই। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন, ব্যাংকে অবৈধ লেনদেনসহ আরও বেশ কয়েকটি অভিযোগে মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ৯ মার্চ পি কে হালদার-সংশ্লিষ্ট ১০টি মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়। এসব মামলার এজাহারে রুনাইয়ের নাম থাকছে। তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি লিজিং কোম্পানির এক্সিকিউটিভ মাত্র চার-পাঁচ বছরের মধ্যে কীভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেন? এত অল্প সময়ে ব্যাংক হিসাবে ৭০ কোটি টাকা লেনদেন এবং ২৮ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ! যেখানে তার বাবা একজন তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারী। গতকাল সন্ধ্যায় দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অর্থ পাচার নিয়ে আমরা তো আমাদের অবস্থান আগেই পরিষ্কার করেছি। যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে পি কে হালদারের বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন দুদক কর্মকর্তারা। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য যা প্রয়োজন তা-ই করা হবে।’ যদিও গত সোমবার এক ব্রিফিংয়ে দুদক সচিব বলেছিলেন, ৮ মার্চ নাহিদা রুনাইসহ পি কের ৪৪ সহযোগীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রুনাইসহ ৩৩ জনের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বিবরণী জারির নোটিস দেওয়ার এবং ৩৩ জনের বিরুদ্ধে ১০টি মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যার প্রতিটি মামলার প্রধান আসামি হচ্ছেন পি কে। আগামী রবিবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাগুলো হওয়ার কথা রয়েছে। জানা গেছে, পি কে হালদারের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত করছেন দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল। আর নাহিদা রুনাই বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিয়মিত অফিস করেছেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসে। তিনি পি কে হালদারের কমপক্ষে চারটি প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করতেন। চট্টগ্রামের খুলশী থানার পূর্ব নাসিরাবাদের জাকির হোসেন বাইলেন স্থায়ী ঠিকানার বাসিন্দা নাহিদা রুনাই। বাবা মফিজুর রহমান চট্টগ্রামে একটি সরকারি দফতরে ‘করণিক’ পদে চাকরি করতেন। রুনাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষে জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় এসে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডে চাকরি পান। ২০১১-১২ সালে পি কের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। ওই সময় ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন পি কে। একপর্যায়ে পি কের ঘনিষ্ঠ বান্ধবীদের একজন হয়ে ওঠেন রুনাই। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। পি কে হালদার রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে রুনাইকে নিয়ে আসা হয় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেসে। দ্রুত সময়ে তাকে চারটি পদোন্নতি দিয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট করা হয়। স্বামী-স্ত্রীর মতোই ছিল তাদের সম্পর্ক। আর তা ছিল ওপেন সিক্রেট। পি কের সব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তা জানতেন বলে জানিয়েছেন সম্প্রতি গ্রেফতার হয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়া পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন মহলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করতে রুনাইয়ের দক্ষতা ছিল চোখে পড়ার মতো। অসাধারণ এক দক্ষতার বলে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করতে পারতেন রুনাই।

দুদকের অনুসন্ধান দলের একজন কর্মকর্তা বলেন, পি কের দখলে থাকা ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটিজের ১০০ কোটি টাকা নিজের মতো করে খরচের সুযোগ পান রুনাই। এ ছাড়া পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানিতে (বিআইএফসি) রুনাইয়ের দাপট ছিল।

এদিকে ১৩ জানুয়ারি অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় পি কের আরেক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেফতার করে দুদক। তাকে দুই দফায় রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর